• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৮:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৮:৫৭ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন

অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আরও উন্নয়নের জন্য অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা চেয়ে বলেছেন, এটি হবে দু’দেশের জন্য একটি ‘উইন-উইন অপশন’।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও বৃহত্তম বিনিয়োগ অংশীদার হিসেবে দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। আরও উন্নয়নের জন্য আপনাদের বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা জরুরি। এটি আমাদের উভয়ের জন্য একটি ‘উইন-উইন অপশন’।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা লোট নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে ইউএস চেম্বারস অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিযাত্রায় আপনাদের আমাদের সঙ্গে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, এ ধরনের লাভজনক পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করে স্থায়ী বন্ধুত্বে রূপ দেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার। এর বহুবিধ সুবিধার মধ্যে কয়েকটি হলো- আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা; উদার ট্যাক্স হলিডে; যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি শুল্ক; অবাধ ও এক্সিট নীতি; এক্সিটের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যার্পণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সংসদের প্রাসঙ্গিক আইন ও দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সংরক্ষিত। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি’ ও ‘দ্বৈত করারোপ সমঝোতা’ স্বাক্ষর করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ান স্টেপ সুবিধা সম্বলিত ১০০টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এগুলোর মধ্যে এক ডজন প্রস্তুত রয়েছে এবং ৪টি ৩টি দেশকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য বেশ কিছু হাইটেক পার্কও প্রস্তুত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে তার সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের অব্যাহত বৃদ্ধি বাংলাদেশের ওপর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন।

তিনি বলেন, এমনকি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ গত ৫ বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতার বিচারে এটি মার্কিন বিনিয়োগ সম্ভাবনার অনেক কম। কৌশলগত অবস্থার কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ইকোনোমিক হাব হওয়ার বিপুল সম্ভাবনাময়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমে ভারত, উত্তরে চীন, পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং নিজের সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ ৪শ’ কোটি লোকের একটি সম্মিলিত বাজারের মাঝখানে অবস্থিত। যেহেতু বাণিজ্যের জন্য আঞ্চলিক সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু প্রতিবেশী ও পুরো অঞ্চলের সঙ্গে ভৌতভাবে সংযুক্ত হওয়ার জন্য সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন ও বিসিআইএন-ইসি’র আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম, চাল উৎপাদনে চতুর্থ বৃহত্তম, অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম বৃহত্তম এবং তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান দখল করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য বর্ধমান খাতগুলো হলো- ওষুধ, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া ও আইসিটি। সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার, পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বন্যা, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব রোধের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত একটি অনন্য কৌশলগত পরিকল্পনা হলো বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অভিন্ন মূল্যবোধ ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, সামরিক ও সন্ত্রাস দমনসহ অনেক বিষয়ে নিয়মিত সংলাপ অনুষ্ঠান করছি। আমরা সকলের সামষ্টিক সমৃদ্ধির জন্য একটি মুক্ত, খোলা, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য একযোগে কাজ করার প্রত্যাশা করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘দু’দেশের অভিন্ন সমৃদ্ধির লক্ষ্য আমাদের সম্প্রসারমান বাণিজ্য সম্পর্কে প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে এবং গত অর্থবছরে এর মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯শ’ কোটি মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য উন্নয়ন দেশগুলোর তুলনায় অন্যায্য উচ্চ ট্যারিফ প্রত্যাহার করা হলে তা আরও বেশি হতে পারতো।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্য ঘোষণা করেছে। এটি ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে আমাদের প্রচেষ্টার ফসল।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশে উত্তরণ। বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিপুল আর্থ-সামাজিক রূপান্তর ঘটছে তা বিবেচনা করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছার ব্যাপারে আস্থাবান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ছিল ৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে এবং চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রবৃদ্ধির হার ডাবল ডিজিটে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি অর্থনৈতিক সূচক হলো- মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে, রফতানি আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৪ হাজার ৫৩ কোটি বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে; মানব উন্নয়ন সূচক বেড়ে বার্ষিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে সাহায্য গ্রহিতা দেশ থেকে বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে পিপিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৩০তম শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশ এবং এটি ক্রম-বর্ধমানভাবে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আউটলুক-২০১৯ বাংলাদেশকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এতে এই সাফল্যের কারণ হিসেবে দৃঢ় নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার ও অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি ও সঠিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারকে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন আমাদের সরকার দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচএসবিসি তাদের ২০১৮ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম শীর্ষ অর্থনীতি এবং বিশ্বের ৩টি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশের অন্যতম হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটি সমরূপ জনসংখ্যার একটি প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ‘অধিকাংশ অনুর্ধ্ব-২৫ যুবশক্তির বিশাল জনসংখ্যা খুবই প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে কর্মে নিয়োজিত হবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ধমান বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে দ্রুত নগরায়ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির বর্ধমান বিকাশ বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক  আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইউএস চেম্বারস অব কমার্স এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে যোগ দেন। বাসস

এসএমএম

আরও পড়ুন