• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:১১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:১১ এএম

১০ বছরে ১৯ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাসিনো আমদানি

১০ বছরে ১৯ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাসিনো আমদানি

প্রায় ১৯ টি আমদানিকারকের মাধ্যমে গত দশ বছরে দেশে এসেছে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম। মূলত খেলনা সামগ্রীর সঙ্গে এসব পণ্য খালাস করা হয়েছে কাস্টমস হাউস দিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অনুসন্ধানে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে এনবিআরের এই গোয়েন্দা সংস্থা।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আসা চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত আমদানিকারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এ এম ইসলাম অ‌্যান্ড সন্স, ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজ, বি পেপার মিলস লিমিটেড ও এ থ্রি ট্রিড ইন্টারন্যাশনাল। মিথ্যা ঘোষণাসহ বিভিন্ন কৌশলে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করা ২০ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এর আগে প্রাথমিকভাবে পাঁচ আমদানিকারকের কথা জানানো হলেও পরে আরও ১৫ আমদানিকারককে চিহ্নিত করা হয়। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুরঞ্জন শেঠ তাপসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয়ে বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। এর আগে পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিঅ‌্যান্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক আশরাফুল ইসলামকে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আইন-কানুন অনুসরণ করেই আমদানিকারদের পক্ষে যথাযথ শুল্ক-কর দিয়ে পণ্যগুলো ছাড় করেছি। কোনও অনিয়ম বা মিথ্যা ঘোষণা ছিল না। একই কারণে এ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আহসানুল আজমকে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এরই মধ্যে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি স্থগিতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে ক্যাসিনো অবৈধ হলেও এতদিন আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত পণ্যগুলো ছিল না। ফলে সেগুলো খেলার সামগ্রী ও বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দ্রব্যের সঙ্গে এসেছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এসব পণ্য দেশে নিষিদ্ধ। শুধু বিদেশিদের জন্য সীমিত আকারে মদ চালু ছিল। দেশে ক্যাসিনোর কোনও অনুমতি নেই।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনো পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাণিজ্য সচিবকে ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত পণ্যকে আইপিওতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেয়া হবে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, জুতা, কম্পিটার, মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ কিংবা ফার্নিচারের আড়ালে আমদানি হয়েছে ক্যাসিনো সরঞ্জাম। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জুয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম প্রায় ১ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা। মিথ্যা ঘোষণায় কোটি কোটি টাকার শুল্ক-করও ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেছে। কোনও আইনের লঙ্খন করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র আরও জানায়, আমাদানিকারকদের মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর এ এম ইসলাম অ‌্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে একটি বড় চালান ছাড় করায়। কিন্তু গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড আনা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটারের মাদার বোর্ডের নামে, এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্ট জন্মদিনের সরঞ্জামের নামে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বি পেপার মিলস লিমিটেড ফার্নিচারের নামে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করে বলে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।

পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজ ক্যাসিনো সরঞ্জাম ঘোষণা দিয়েই পণ্য আমদানি করেছে। এসব আমদানিকারক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্যগুলো আমদানি করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোর মেশিনসহ খেলার বেশিরভাগ সামগ্রী চীন থেকে আমদানি হয়েছে। রয়েছে অর্থ পাচারের তথ্যও। একই সঙ্গে ক্যাসিনোতে জুয়ায় টাকা লগ্নিকারী ব্যক্তিদের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েক দিনে আরও কিছু আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে শুল্ক গোয়েন্দা। ক্যাসিনোর মেশিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কীভাবে এসব মেশিন আমদানি করেছে তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেবে শুল্ক গোয়েন্দা।

এআই/এসএমএম

আরও পড়ুন