• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৭:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৭:৫৩ পিএম

রফতানি বন্ধ করলো ভারত

পেঁয়াজের বাজার ফের অস্থিরতার শঙ্কা

পেঁয়াজের বাজার ফের অস্থিরতার শঙ্কা

দেশের পেঁয়াজের বাজার অনেকটাই ভারত নির্ভর। এরই মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম হুট করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে যায়। এবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।  তাতে করে দেশের বাজারে দাম বাড়ার পাশাপাশি অস্থিরতার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, বন্যায় ভারতের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় চলতি বছরে মৌসুমী পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এ বছর ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য বেশ চড়া। তারই প্রেক্ষিতে দেশটির সরকার রান্নার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ উপাদানটির রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সরকার বলছে, উৎপাদন ও মজুতের ঘাটতির কারণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারণ বিষয়ক মুখপাত্র সীতাশু কর বলেন, রফতানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানিতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। 

ভারত হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ। সম্প্রতি ভারতের বেশকিছু শহরে সবজির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। উৎপাদন কম এবং বছরের শেষে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন। তাই ভোগ্যপণ্য বিষয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানাচ্ছে রয়টার্স।

গত জুনে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার তখন রফতানি ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। মূলত আগের বছরের মজুদ থেকে এ বছরে পেঁয়াজ সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বপনে বিলম্ব হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটি। ভারতের বেশকিছু রাজ্যে চলতি বছরে দ্বিতীয় দফায় টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অনেক আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় পেঁয়াজের কাঙ্খিত উৎপাদন হয় নি। ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

আগামী অক্টোবরের শেষে নতুন ফসল ওঠা পর্যন্ত এ সঙ্কট থাকবে।

আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাটি আরোপ করে।  

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়, সেসব রাজ্যে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানী নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ের বাজারে পেঁয়াজের প্রতি কেজি ৭০-৮০ রুপিতে গিয়ে ঠেকেছে। একই সঙ্গে চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই বাড়তি। এসব স্থানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ রুপি পর্যন্ত উঠে গেছে। তাছাড়া ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও এই পেঁয়াজের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতীয় কনজিউমার অ্যাফেয়ার ডিপার্টমেন্টের মূল্য পর্যবেক্ষণ সেলের মতে, চলতি বছরের গত ছয় মাসেই পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ২৫ রুপি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত গোটা দেশে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে পেঁয়াজ অধিক উৎপাদনশীল রাজ্য মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট এবং বিহারে এর উৎপাদন অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। যার প্রভাব এরই মধ্যে ভারতের খুচরা বাজারে পড়তে শুরু করেছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম আগে থেকেই চড়া, আরও বাড়ার শঙ্কা

দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন চড়া। ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের রফতানি বন্ধের ঘোষণায় নতুন উৎসের খোঁজে আমদানিকারকরা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে। মিসর ও তুরস্ক থেকেও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নূর মিয়া বলেন, ভারতের রফতানি বন্ধের খবর পাওয়ার পর থেকে পেঁয়াজের পাইকারি দর আগের দিনের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ৬৫-৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৪-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। 

এ দিকে দেশটির পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ প্রায় ৪ হাজার রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কুইন্টাল প্রতি রেকর্ড এক হাজার রুপি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। এমন অবস্থায় গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এই পেঁয়াজের দাম।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলারে বেঁধে দেয়। 

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। 

দেশের পেঁয়াজের চাহিদা ও জোগানের কোনও সঠিক হিসাব নেই। ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রতি বছর চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে হয়। বাকিটা আমদানি হয়। আমদানির প্রায় পুরোটুকুর উৎস ভারত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন।

এআই/এসকে/এসএমএম

আরও পড়ুন