• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০১৯, ১২:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৬, ২০১৯, ১২:১১ পিএম

‘সম্রাটকে শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক’ বলেছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান

‘সম্রাটকে শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক’ বলেছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট (বাঁয়ে), ওমর ফারুক চৌধুরী - ফাইল ছবি

ক্যাসিনো ‘সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট বেশ কিছু দিন ধরেই সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন। চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু পর থেকেই আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন তিনি। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সম্রাটের অবস্থান নিয়ে সারা দেশেই চলছিল নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। চলমান অভিযানে সম্রাট ও সহযোগীরা গ্রেফতার বা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় সবার মধ্যেই এ নিয়ে আলোচনা ছিল। সারা দেশের মানুষ এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলে আসছিলেন এ অভিযানে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এর আগে সম্রাটকে দেশের শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক ও সম্রাটের নেতৃত্বাধীন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগকে দেশের শ্রেষ্ঠ সেরা সাংগঠনিক ইউনিট ঘোষণা করেছিলেন যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর যুবলীগ নেতারা বলে আসছিলেন, নতুন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হলে সম্রাট ওই পদে ভবিষ্যতে না-ও থাকতে পারেন।

অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ১৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাকে আটকের সময় বিপুল পরিমাণ টাকা, অবৈধ অস্ত্র ও বিদেশি মদ, ইয়াবাসহ অন্য মাদকও উদ্ধার করা হয়। ৪ মামলায় খালেদকে রিমান্ডে নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ব্যবসায় ও কর্মকাণ্ডে খালেদের ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সম্রাটের। তবে গত মাসে মিরপুরে যুবলীগের এক সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যান দাবি করেছিলেন, যুবলীগের শ্রেষ্ঠ ইউনিটের শ্রেষ্ঠ সংগঠক ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এক বিবৃতিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যুবলীগের কোনো নেতা বা শাখার (যে পর্যায়েরই হোক না কেন) বিরুদ্ধে ন্যূনতম অভিযোগেরও যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে যুবলীগ ওই ব্যক্তি ও কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’ পরে অবশ্য দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।  

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সম্রাটের অবস্থান নিয়ে সারা দেশেই চলছিল নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই তিনি তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, যা সর্বত্র আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও অস্বীকার করছিল না, তিনি কার্যালয়ে নেই। এ-ও জানা যাচ্ছিল, সম্রাট দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। 

সম্প্রতি সম্রাটের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে ২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করবে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের ধরা হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পাব, তার বিরুদ্ধেই আমরা অ্যাকশনে যাব। কাউকে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্রাটের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’।   

১৯৯০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন সম্রাট। তখন অবিভক্ত ঢাকা ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন তিনি। সেসময় সারাদেশে সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল। সম্রাট রাজধানীর রমনা অঞ্চলে আন্দোলনের সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে তখন তাকে জেলও খাটতে হয়। সম্রাটের পৈত্রিক নিবাস ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। নিজের এলাকায় আর্থিক সহযোগিতা, বিশেষ করে স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসার ‘বড় দাতা’ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার।

১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সেই আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও হয়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। তখন ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি ছিলেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। সম্রাট ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। একটি হত্যা মামলায় শাওনের প্রস্থানের পথ ধরে যুবলীগের ক্ষমতার রাজনীতিতে কার্যত উত্থান ঘটে সম্রাটের।  শাওন চৌধুরীর প্রস্থানের পর মহানগর দক্ষিণের সভাপতির পদ পান সম্রাট। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন ক্ষমতাবান হতে থাকেন তিনি। আওয়ামী লীগের বড় বড় সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিচিত মুখ হিসেবে উপস্থিত হতে থাকেন সম্রাট। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করতেও দেখা গেছে তাকে।

বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সদর দফতর ভবন নির্মাণে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন সম্রাট। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মূলত এ ঘটনার পর থেকেই সম্রাটের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হতে থাকে। এরপর রাজধানীজুড়ে জুয়া, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অভিযোগ দিন দিন বাড়তেই থাকে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গত সভায় যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়া-ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তিনি সকল দুর্নীতি, অপকর্ম ও অনৈতিক বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথাও জানিয়ে দেন তিনি। এর পরই কার্যত নড়েচড়ে বসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, বেশ কিছুদিন ধরেই সম্রাটের কার্যক্রমে ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। সম্রাটের আইনশৃংখলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন