• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৪, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম

রাজনীতিমুক্ত বুয়েট চান বেশিরভাগ অভিভাবক, তবে ভিন্নমতও আছে

রাজনীতিমুক্ত বুয়েট চান বেশিরভাগ অভিভাবক, তবে ভিন্নমতও আছে
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সন্তানদের কেন্দ্রে পাঠিয়ে ক্যাম্পাসে অপেক্ষারত অভিভাবকরা - ছবি : কাশেম হারুন

নিরাপত্তাজনিত সব ধরনের শঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম ধাপে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হয় আর্কিটেকচারের বাকি ২ ঘণ্টার পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা শুরুর আগে বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত অভিভাবকদের চোখে-মুখে ছিল এক ধরনের দুশ্চিন্তার ছাপ। তবে বুয়েট প্রশাসনের নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে অনেকেরই দুশ্চিন্তা ঘুঁচতে থাকে। পাশাপাশি, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি পরীক্ষা কেন্দ্রের আসন খুঁজে দিতে সহযোগিতা করায় অল্প সময়েই পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের আতঙ্ক কেটে যায়। বুয়েট প্রশাসন ও আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পানি ও খাবার সরবরাহ করায় বুয়েট জুড়ে দেখা দেয় এক অনবদ্য চেহারা। আগত পরীক্ষার্থী-অভিভাবক ও বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চার হয় প্রাণের স্পন্দন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৮টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত যারাই ছিলেন বুয়েট ক্যাম্পাসে তারাই হয়েছেন বিস্মিত। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, দুদিন আগেও কেউ বুয়েটের এমন পরিবেশ চিন্তাই করতে পারেনি।

ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগের বিষয়ে বিশেষ করে ক্যাম্পাসে সংগঠনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা বিষয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললে বেশিরভাগ অভিভাবকই বলেন, বুয়েট বা মেডিকেল কলেজের মতো বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকাই কাঙ্ক্ষিত। কারণ, বুয়েট বা মেডিকেল কলেজগুলোয় পড়াশোনা করার সুযোগ পায় কেবল অতি মেধাবীরা। রাজনীতির মতো ঘটনায় তারা সম্পৃক্ত হয়ে পড়লে জাতি বিশেষায়িত সেক্টরগুলোয় পরিপূর্ণ স্কলার পাবে না।
তবে সংখ্যায় কম হলেও অল্প কয়েকজন অভিভাবক ঢালাওভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, রাজনীতির মধ্যে দিয়ে তরুণরা গড়ে না উঠলে দেশ বদলে দেয়ার মন্ত্রই শিখবে না আগামী প্রজন্ম। এক্ষেত্রে আগামীতে গভীর খাদে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে পুরো জাতি। 

একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা এহতেশামুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমি বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া মেধাবিরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাদের মেধা ডাইভার্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। যা জাতির ভবিষ্যতের জন্যই কাম্য নয়। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো পড়াশোনা খুব সহজ নয়। শিক্ষার্থীদের পুরো সময়টাই পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকার কথা। এর মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী যদি পাবলিক ফাংশনে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তো ওই শিক্ষার্থী অবধারিতভাবে একাডেমিক ক্ষেত্রে খারাপ করবে। এটা বাঞ্ছনীয় নয়।

পরীক্ষা শেষে বের হয়ে আসছেন ভর্তিচ্ছুরা  - ছবি : কাশেম হারুন

সিটি ব্যাংকে কর্মরত ফরিদা জাহান বলেন, ছেলে বুয়েটে চান্স পেলে অবশ্যই তাকে এখানে পড়াতে চাই। আবরার ফাহাদের ঘটনার পর মনের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাও কাজ করছে। তবে বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় খানিকটা ভরসা পাচ্ছি। 

জাহিদুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, রাজনীতি সচেতন আর রাজনৈতিক কর্মী বনে যাওয়া এক কথা নয়। মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাজনীতি সচেতন হোক, তবে ছাত্রাবস্থায়ই তারা যেন রাজনৈতিক দলের কর্মী বনে না যান। মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে গেলে লাভের চেয়ে দেশের ক্ষতিই বেশি। তাই আমি চাই, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে সংগঠনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধই থাক।

অবশ্য বাসুদেব দাশ নামের এক অভিভাবক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী কেবল একটি পরিবারের সম্পদ নয়- মেধাবীরা একটি জাতির সম্পদ। রাজনীতির মধ্যে দিয়ে মেধাবী তরুণরা গড়ে উঠলে এক সময় পুরো জাতিরই তার কাছ থেকে সেবা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর মেধাবী যদি একটি পরিবারের সম্পদ হয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে ওই মেধাবী হবেন অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক, সংকীর্ণ চিন্তার একজন মেধাবী। তিনি পরিবারের বাইরে, দেশের লাভের কারণ হয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করি না। এজন্যই আমি বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে নই। বরং, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে বুয়েটের হলে হলে যে প্রশাসনিক অনিয়ম হচ্ছে বা হয়- সেসব যেন ঘটতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর গভীর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বুয়েটসহ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিষিদ্ধ করা হয় বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন