• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৮:৩৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৮:৪৪ এএম

কারাগারের সূর্যমুখী সেলে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের মিলন মেলা 

কারাগারের সূর্যমুখী সেলে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের মিলন মেলা 
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সম্রাটের মতোই রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে রয়েছে ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত প্রায় হাফ ডজন নেতা। তারা হলেন- খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, আরমান, জিকে শামীম ও লোকমান হোসেন। সবকিছু মিলে কারাগারের সুর্যমুখী সেলটি হয়ে উঠেছে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের মিলন মেলা। 

এদিকে ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা ও অপকর্মের অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া এবং ঢাকা মহানগর ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারেও তাদের প্রভাব কমেনি। কারাগারের সাধারণ সেলে থাকার কথা থাকলেও তারা রয়েছেন সেমি ভিআইপি সেল সুর্যমুখী সেলে। 

কারা সূত্র জানায়, ক্যাসিনোতে জড়িত সব যুবলীগ নেতাদের ( বহিষ্কৃত) একই ভবনের থাকার সুবাদে আয়েশেই দিন যাচ্ছে ক্যাসিনোর গডফাদারদের। দিনভর তাস খেলে, গল্পবাজী আর আড্ডা মেরে দিন যাচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, কারাগারেও তাদের লোকজনের অভাব নেই। সেখানে রয়েছে খিলগাঁও, রমনা ও মতিঝিল এলাকার একাধিক অপরাধী। যারা আগে থেকেই এ সকল ক্যাসিনোর গড ফাদারদের সঙ্গে সখ্যতা ছিল।
 
সূত্র মতে, কারাবন্দি ক্যাসিনোর হোতাদের জন্য প্রতিদিনই সাক্ষাতের মাধ্যমে যাচ্ছে রাজধানীর শুরিটোলার হোটেল আল রাজ্জাকের সকল সুস্বাদু খাবার। পাশাপাশি সিগারেট থেকে শুরু করে আরও কিছু তারা হাতের কাছে পাচ্ছেন। মাসে একবার সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে কারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এদের সঙ্গে প্রতিদিনই কেউ না কেউ সাক্ষাত করছেন। ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের সবার সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি খাবার থেকে শুরু করে সব কিছু দিচ্ছেন সাক্ষাৎপ্রার্থীরা।
 
এবিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, জেল কোড মেনেই সকল বন্দির খাবার থেকে শুরু করে সব কিছুই করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবিধির বাইরে কোন কিছু হচ্ছে না। ক্যাসিনো সিন্ডিকের হোতা বলেন আর অন্য বন্দি বলেন, ভিআইপি ছাড়া সব সাধারন বন্দি আমাদের কাছে সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মামলার একাধিক বন্দি আসলে তাদেরকে পৃথক ভাবে সেলে রাখা হয়ে থাকে। কারো সঙ্গে  কারো যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে না। তিনি আরো বলেন, ক্যাসিনো সংক্রান্ত বন্দির সকল সেল এবং করিডোরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।  
 
এদিকে রমনা, মতিঝিল ও খিলগাঁও এলাকার জুয়ারিরা গ্রেফতারকৃতদের ক্যাসিনোর হোতা হিসেবে চিনে। আগে প্রাণ ভয়ে তাকে কেউ কিছু বলতো না। গ্রেফতার হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে এদের অতীত-বর্তমান অপর্কমের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।

জানা গেছে, কারাগারে আটক কাউন্সিলর পাগলা মিজান ও  খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে খালেদ ও মিজান দুজন মিলে হামলা চালিয়েছিলো। তারা দুজনই শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় সশরীরে অংশ নেন। এ ঘটনায় মামলার চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) খালেদকে মৃত দেখানো হয় এবং তার নাম বাদ দেয়া হয়। এরপরই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে বোল পাল্টে দিয়ে যুবলীগে যোগ দেন ( অনুপ্রবেশ ) তারা। মিজান হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ও ওর্য়াড কাউন্সিলর। খালেদ রাতারাতি হয়ে যান যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। খালেদ সবশেষ ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

১৯৮৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ফ্রিডম পার্টির নেতাদের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সৈয়দ নাজমুল মাহমুদ মুরাদ, জাফর আহম্মদ মানিক ও পাগলা মিজান ও  এদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সশরীরে অংশ নেয়।  ঘটনার আট বছর পর মুরাদ ও মানিকের সঙ্গে খালেদের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ)। কিন্তু পাগলা মিজান পালিয়ে বিদেশে চলে গেলেও ঢাকার সূত্রাপুর থানার একটি হত্যা মামলার সূত্রের বরাত দিয়ে চার্জশিটে বলা হয়, খালেদের মৃত্যু ঘটেছে। তবে খালেদ কখন কীভাবে মারা গেছেন তা চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়নি।

অপরদিকে খালেদের বাবার নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়ার কথা বলা হলেও চার্জশিটে এসবের কিছু রাখা হয়নি। ক্যাসিনো খালেদের দীর্ঘ দিনের সহযোগী মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ফ্রিডম পার্টির নেতাদের ওই হামলায় সরাসরি অংশ নেয় খালেদ।

সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে ওই মামলার চার্জশিট দেয় সিআইডি। দীর্ঘ ২২ বছর পর অভিযোগ উঠেছে, ক্যাসিনো খালেদই ওই হামলায় জড়িত খালেদ। কিন্তু বলা হয়েছিল, তিনি মারা গেছেন। ওই মামলার বিচার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে ওই হামলা মামলার রায় হয়। রায়ে খালেদের দুই সহযোগী সন্ত্রাসী মুরাদ ও মানিকসহ ১১ জনকে ২০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়। কালের বির্বতনে ফ্রিডম পার্টির সেই খালেদ যুবদলের প্রভাবশালী নেতা বনে যান।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্যাসিনোর মালিক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‌্যাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করে। একই সময় ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসময় ওই ক্যাসিনোর ভেতর থেকে ২৫ লাখ টাকাসহ ১৪২ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। অভিযান শেষ করার পরই খালেদের বাড়িতে ঢুকে র‌্যাব।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা সম্রাট, আরমান, লোকমান হোসেন, জিকে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতাদের বিরুদ্ধে। 

এইচ এম/বিএস 

আরও পড়ুন