• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৯, ১০:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০১৯, ১০:০১ পিএম

পুলিশের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি

ভোলায় নিহত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো : চিকিৎসক

ভোলায় নিহত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো : চিকিৎসক

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ হতে একজন করে মোট চারজন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে এবং কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি গুজবে কান না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও পরে শর্টগান চালায় পুলিশ। এরপর পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

পুলিশের দাবি, সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করলেও কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারা দেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি এ ঘটনাটি নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তি যেন না হয়, সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনাটিও তুলে ধরা হয়েছে।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার ‘বিপ্লব চন্দ্র শুভ’ নামের একজনের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামের এক যুবক রাত আটটায় ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর-৪৪০, তারিখ ১৮ অক্টোবর। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সে ওসিকে জানায়। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বোরহান উদ্দিন থানায় আনা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যে শুভর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উত্তেজিত হতে থাকেন। ফেসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করেন স্থানীয় আলেম সমাজ। পরদিন সকাল ১১টায় ঈদগাহ মাঠ ময়দানে তারা প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার অফিসার ইনচার্জ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বোরহান উদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় নিয়ে বিষয়টি আলোচনা হয়। আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে আটক দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা করেন।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সমাবেশ বাতিলের ঘোষণা সত্ত্বেও পুলিশ সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকে। পরদিন সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক আনে একটি মহল। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেম নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবে না। ইতিমধ্যেই এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ভোলায় আসেন। অতিরিক্ত ডিআইজি ও ইউএনওকে নিয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সকল আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে তাদের বারবার আশ্বস্ত করেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ ময়দান ত্যাগ করেন। উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ অন্য কর্মকর্তারা মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকেন। তারপর সহসাই একদল লোক বিনা উসকানিতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ করে। আক্রমণকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণকারীদের গুলিতে পুলিশের একজন মারাত্মক জখম হয়। মারাত্মক আহত হন পুলিশের আরেক সদস্য। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিও আহত হন। এই পরিস্থিতিতে, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আক্রমণকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা থেঁতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আজকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করলেও, কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারা দেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

এনআই

আরও পড়ুন