• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৮:২৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৮:২৬ এএম

বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে ইসি!

বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে ইসি!
ইসি ভবন

যুগোপযোগী করার নামে বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর অংশ হিসেবে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে ইসি দু’দিনব্যাপী একটি কর্মশালা শেষ করেছে। কর্মশালা থেকে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে কী ধরনের নিবন্ধন ফরম করা প্রয়োজন, আইন-বিধিমালায় কী ধরনের সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন প্রয়োজন- এসব বিষয়ে ইসির মাঠপয়ায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। 

জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা এবং ভোটারদের তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার ফলে এখন আর জাতীয় নির্বাচনের আগে আর  নতুন করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার প্রয়োজন পড়ছে না। আইন  মেনে প্রতিবছরই ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ হওয়ায় এখন আর  একযোগে সব নাগরিককে ভোটার করার উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় না। ফলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহেও আগ্রহ হারাচ্ছে ইসি।বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করার সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে এলাকাভিত্তিক নিবন্ধন কেন্দ্র খুলে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’র মতো তথ্য ফরম পূরণ করা, নাগরিকদের চোখের আইরিশ ও ১০ আঙুলের ছাপ নেয়ার কাজ করতে ইচ্ছুক ইসি। তবে এ পদ্ধতি তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কি ধরনের সমস্যা তৈরি হবে, তথ্য ফরমে ভোটার হতে ইচ্ছুক নাগরিকদের কী কী তথ্য উল্লেখ করতে হবে, ভোটার হতে নিজে থেকে নাগরিকরা নিবন্ধন কেন্দ্রে আসবেন কিনা- এসব বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ-সুপারিশ চায় ইসি।

রোববার (২০ অক্টোবর) ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ এবং ভোটার নিবন্ধন সংক্রান্ত ফরমসমূহ পুনর্বিন্যাসকরণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমিশনার কবিতা খানম বলেন, বর্তমানে যেহেতু নির্বাচন কমিশন গত হওয়া একবছরে ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকদের ভোটার করার কাজ হালনাগাদ করে তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মতো বিপুল কর্মযজ্ঞ করার বাস্তবসম্মত নয়। এটি ব্যয়বহুল। একই প্রক্রিয়াটি জটিল। তাছাড়া হালনাগাদ কাজের সময় প্রায়ই অভিযোগ উঠে তথ্য সংগ্রহকারীরা তথ্যসংগ্রহে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যসংগ্রহের বিকল্প এখন খোঁজার সময় এসেছে।

একই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যসংগ্রহের কাজ না-ই করা যেতে পারে। তবে এর বিকল্প হিসেবে আমাদের এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে যা একই সঙ্গে সহজ, কার্যকরী এবং ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা কোনোভাবেই যেন তা বিঘ্নিত না করে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেক কষ্ট করে বহু শ্রমে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি নাগরিকের বিশুদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি করেছে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে এই বিশুদ্ধ ডাটাবেজ কোনোভাবে কলুষিত হয়। 

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা মানে নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা, মৃত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া এবং একজন ভোটারকে স্থানান্তরের সুযোগ দেয়া। অথচ হালনাগাদে সাধারণভাবে নতুন ভোটাররা অন্তর্ভুক্ত হন ঠিকই কিন্তু তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তন তেমনভাবে হয় না। মৃত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া না গেলে ইসির ভোটার তালিকাকে কিন্তু বিশুদ্ধ বলা কঠিন হবে। তিনি সার্বিক সকল সুবিধা ও অসুবিধারর দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে ভোটার হালনাগাদকরণ কাজকে যুগপোযোগী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় আইনে থাকলেও কিছু তথ্য সংগ্রহকারী ভোটারদের বাড়িতেই যান না। এর বদলে পাড়া-মহল্লার প্রভাবশালী ও পরিচিতদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন কেউ কেউ। আবার তথ্য সংগ্রহকারীরা তাদের পছন্দমতো কোনো স্কুল, কলেজ, স্থানীয় কোনো ক্লাব কিংবা মসজিদ প্রাঙ্গণে বসে নিজেদের বেধে দেয়া সময়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। ফলে ভোটারযোগ্য অনেকে না জানার কারণে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে
পারেন না।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের মতো ভোটার রয়েছে। এবারের হালনাগাদে ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে ইসি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি টাকা। ২০০৪ গালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এ রকম নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবার। এর মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের নাম ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর যাদের বয়স এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু গত ২৩ এপ্রিল। হালনাগাদের প্রাপ্ত ভোটার তথ্য নিবন্ধন শেষে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এইচএস/বিএস