• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম

জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে সতর্ক আওয়ামী লীগ

জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে সতর্ক আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিবেদন

.....

● বিশ্বস্ত লোক ও গোয়েন্দাদের দিয়ে তালিকা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

● দেড় হাজার অনুপ্রবেশকারী শনাক্ত

● বিতর্কিতদের ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে জেলায় জেলায় চিঠি 

টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর এ কারণে দলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে ভূঁইফোড় ও সুবিধাবাদী বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। তাদের কারণে দলটি নানা বিতর্কের মুখে পড়েছে। এসব অনুপ্রবেশকারীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারপরনাই বিরক্ত, একই বিব্রতও দলটির হাই কমান্ড। দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটি সে সব বিতর্কের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে শুদ্ধি অভিযান। আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বের করারও উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের আসন্ন ২১তম জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনে বিতর্কিত বা অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের তৃণমূল কমিটিতে এ তালিকা ধরে অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা-সম্বলিত একটি চিঠি বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।

জেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে দলীয় গঠনতন্ত্র মানতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছেন। তারা যেন কোনওভাবেই আওয়ামী লীগের কোনও পদে আসতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। ওই তালিকায় দেড় হাজারের মতো অনুপ্রবেশকারীর নাম, ঠিকানা, পূর্বের রাজনৈতিক আমলনামা রয়েছে। 

শুক্রবার (১ নভেম্বর) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজারে উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা ভালো মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, তারা দলের নেতৃত্বে আসতে পারে। সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে যারা আসে, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ভূমিদস্যু, যাদের ইমেজ খারাপ, যাদের রাজনীতি জনগণের কাছে খারাপ বা প্রশ্নবিদ্ধ— এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী নিজ তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছেন এবং তার কাছে এই তালিকা রয়েছে। 

কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ওই তালিকাটি দলীয় কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই তালিকা বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে সারা দেশে এখন যে সম্মেলন হচ্ছে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব আসে। এই নেতৃত্বে যাতে অনুপ্রবেশকারী বা বিতর্কিত বা অপকর্মকারীরা আওয়ামী লীগের কোনও পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে বিশ্বস্ত লোক এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকা এ দলটিতে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করা শুরু করেন প্র্রায় ৬ মাস আগে। ওই কর্মযজ্ঞের যাছাই-বাছাই শেষে বিতর্কিত অনুপ্রবেশকারীদের চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা দেশের প্রতিটি জেলায় ও সাংগঠনিক ইউনিটে পাঠানো শুরু করে দিয়েছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কেন্দ্র থেকে দেয়া এ সাংগঠনিক চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও থানা কমিটির সম্মেলন করবে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ২৭ টি জেলায় সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলোও কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই শেষ হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ২০ ডিসেম্বরের আগেই অর্থাৎ আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল জেলা সম্মেলন শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দৈনিক জাগরণকে জানান, দলের আসন্ন ২১তম সম্মেলন ঘিরে হাই কমান্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে। ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছে এরই মধ্যে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।   

চিঠিতে জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গড়া নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের পদায়নের বিষয়ে সতর্ক থাকার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দৈনিক জাগরণ এর কাছে তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০-২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড সম্মেলন হবে। এ জন্য ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২৭ টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যসব জেলার দিনক্ষণও দ্রুতই ঠিক করা হবে। আর এ সম্মেলন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানো হবে। 

বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। ২৬ অক্টোবর (শনিবার) ফেনীর মধ্য দিয়ে জেলা পর্যায়ের সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তৃণমূলের সম্মেলন কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, ৮ সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

কাউন্সিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক জাগরণকে বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় বিভিন্ন জায়গায় অনুপ্রবেশকারী, সুযোগসন্ধানী ও বিতর্কিতরা ঢুকে পড়েছে। এদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অনেক সময় বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। এটাই মুখ্য সময় এদের বিষয়ে সতর্ক থাকার। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন কোনওভাবেই বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা দলে জায়গা না পায়।

টিএস/এসএমএম

আরও পড়ুন