• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৭:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৭:৩৩ পিএম

সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি বিরোধী এমপিদের

সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি বিরোধী এমপিদের

সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবিলম্বে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। নারী শ্রমিকদের উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এ দাবি জানান তারা। 

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুলতান মনসুর আহমেদ। তারা প্রত্যেকই নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি করেন।

জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আপনারা যতটা চিন্তিত, আমরা এর চেয়ে বেশি চিন্তিত।

সুলতান মনসুর আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের মান-মর্যাদা ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে মহিলা শ্রমিক না পাঠিয়ে পুরুষ শ্রমিককে পাঠান, আয় দ্বিগুণ হবে। তাহলে ভালো হবে, দেশের মানও বাঁচবে, আমাদের মান-ইজ্জতও বাঁচবে। পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর থাকবে। দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। না হলে আমরা দাসত্বের বাংলাদেশে পরিণত হব।

জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, সবকিছু যেভাবে চিন্তা করা হয় সেভাবেই হয়। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া- যেখানেই বলেন, শ্রমবাজার অনুযায়ী ওনারা যেভাবে চায় ওই হিসাবেই তো পাঠাতে হবে। আর না হলে পাঠানোর দরকার নাই। যখন বলা হয় মানুষ পাঠাও, মানুষ চাইলে তো মানুষ পাঠাব। না চাইলে ওখানে ঠেলে তো মানুষ পাঠাতে পারব না। আমরা চেষ্টা করব নারী শ্রমিকরা যেন সম্মানজনভাবে ওখানে চাকরি করতে পারেন। আর যদি একেবারেই না করতে পারে তাহলে দেখব, চিন্তা করব না পাঠাতে। 

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সৌদি আরবে বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। এটা স্বীকৃত। এই অত্যাচারের কারণে অনেক মহিলাকর্মী সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাচ্ছে, জেলখানায় যায় এবং অনেক কিছু হচ্ছে। এজন্য বহির্বিশ্বে থেকে আমাদের অনেক প্রশ্ন আসছে। মাননীয় মন্ত্রীদের কাছে আমার প্রশ্ন- এই যে মহিলা কর্মী পাঠাচ্ছি, তাদেরকে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট থেকে বাঁচানোর জন্য, তাদের ইজ্জত-সম্মানের সাথে চাকরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বললেন রিক্রুটিং এজেন্ট বিদেশে লোক পাঠায়। তাহলে উনাদের দায়িত্বটা কী? প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বটা কী? আমাদের মা-বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওখান থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে, নানা রকম অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে তারা লাশ হয়ে ফিরে আসে। এ যাবৎ ছয় থেকে সাতশ লাশ এসেছে এবং তাদের সবারই লেখা থাকে- এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয় সেটাও বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি দেখে না। একই রকমের পোস্টমর্টেম করে তারা।

তিনি বলেন, এভাবে আমাদের মা-বোনদের নিয়ে ব্যবসা করতে পারি না। এটা স্বাধীন দেশ। আমাদের সম্মান আছে। ইজ্জত আছে। মাত্র কয়েকটি টাকার জন্য আমরা এ কাজ করতে পারি না। আমাদের দেশটা এখন আর অত গরিব না। আমরা তো তলাবিহীন ঝুড়ি না। কেন মহিলা পাঠাতে হবে? বন্ধ করুন অবিলম্বে। আপনি দেখেন নাই- একেকজন মহিলা ফিরে আসে আর তাদের কীভাবে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়। আপনাদের ঘরে মা-বোন নাই? কেন আমরা কয়েকটা টাকার জন্য ওদের পাঠাব?  মহিলাদের পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের মন্ত্রী কোনো খবর রাখেন না। সেখানে নারী রীতিমতো বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার বসে- কে কত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাবেন। উনারা কোনো খবর রাখবেন না কেন? সুতরাং আমার ছোট প্রশ্ন- মাননীয় মন্ত্রী এটা বন্ধ করবেন কি না। এই টাকা আমাদের প্রয়োজন নাই। মা-বোনদের পাঠিয়ে দিয়ে দেশ বিক্রি করার টাকার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের ইজ্জত বিক্রি করতে পারি না।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন