• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:০৮ পিএম

স্বামীর দাফন শেষে যাওয়ার পথে না ফেরার দেশে জাহেদা

স্বামীর দাফন শেষে যাওয়ার পথে না ফেরার দেশে জাহেদা
পঙ্গু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে আহত সুরাইয়ার পাশে ছেলে ওমর - ছবি : জাগরণ

৭ নভেম্বর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মোসলেমের। মৃত্যুর ৫ দিনের প্রান্তে ১১ নভেম্বর তার বাড়ি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে কোরানখানি পড়ানো শেষে উদয়ন এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন মুসলেমের স্ত্রী জাহেদা (৪৮)। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাতের প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হয় জাহেদাকে।

জাহেদার বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। ট্রেনে জাহেদার সাথে ছিল তার মা সুরাইয়া খাতুন, চার সন্তান- রবিউল (২৭), সুমি (২১), ইমন (১৮) ও মীম (৬)। প্রত্যেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশি আহত সুরাইয়া ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। তার সাথে থাকা প্রবাসী সন্তান মো. ওমর দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে বোনকে অনেক খোঁজ করে পাইনি। পরে মা-ভাইগ্না-ভাগ্নিদের নিয়ে যে যার মতো হাসপাতালে যাই। পরে আমাদের এক স্বজন বোনের লাশ সনাক্ত করেন। আমার বোনের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। পরনের বোরকা ও শাড়ি দেখে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন।

মো. ওমরের সাথে যখন কথা বলছিল, তখন তার পাশে একটি ট্রলিতে শোয়া ছিল আহত সুরাইয়া। কাছেই অপারেশন থিয়েটার। ওমর বলেন, মায়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাই অপারেশনে এখন নেবে কি-না, তা নিয়ে ডাক্তাররা সন্দেহে আছেন। বলেছে জরুরি বিভাগ থেকে এখানে এনে দাঁড়াতে, তাই দাঁড়িয়ে আছি।

দেখা গেছে, সুরাইয়াকে একই সাথে রক্ত এবং গ্লুকোজ স্যালাইন দেয়া হচ্ছিল। তার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তার মুখে কোনো শব্দ ছিল না। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ছিল দ্রুত। রক্তাক্ত দুই পা জুড়ে মোটা ব্যান্ডেজ।

ওমর বলছিলেন, প্রথমে নিই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে আনছি। ওইদিকে বোনের দাফন শেষ বলে খবর পাইছি। অন্য আত্মীয়রা আছে ভাগ্নি-ভাইগ্নাদের নিয়া। জানি না, তারা কোথায় আছে, কী চিকিৎসা চলতেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি দেশে কাজ করেন ওমর। আগামী শুক্রবার তার ফ্লাইট। তিনি বলেন, কী যে করব, জানেন, বুঝতে পারতাছি না। মাথাটা একদমই নষ্ট। বোনটা বিধবা হইল। দুলাভাইকে দাফন করতে শ্রীমঙ্গল গেল। দাফনের পরে কোরান খতম পড়াইল, এরপরে চট্টগ্রাম ফিরতে গিয়া দুঃখী বোনটা এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল।

ওমরের বোনের স্বামী মোসলেম চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কর্মরত অবস্থায় একটি মেশিনের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। চট্টগ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন মোসলেম। বৃহস্পতিবারই জামাতার মরদেহ দাফনের উদ্দেশে শ্রীমঙ্গল ছুটে যান সুরাইয়া। সেখান থেকে সোমবাররাতে উদয়ন এক্সপ্রেসে চড়ে যাচ্ছিলেন মেয়ের চট্টগ্রামের বাসায়।

আরএম/ এফসি

আরও পড়ুন