• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:৩৩ পিএম

গগনবিদারী চিৎকার ‘বাঁচাও বাঁচাও’

গগনবিদারী চিৎকার ‘বাঁচাও বাঁচাও’
দুর্ঘটনাকবলিত দুই ট্রেন -ছবি : জাগরণ

‘রাত পৌনে তিনটা। যাত্রীরা যে যার মতো গভীর ঘুমে। হঠাৎ বিকট শব্দ। ঘুম ভেঙে যায় সবার। ছোটাছুটি শুরু। মনে হচ্ছিল কোনও বিস্ফোরণ ঘটেছে। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। কামরা থেকে বের হয়ে দেখি দেখি নারী-পুরুষের আর্তচিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও বলে করুণ আর্তি।তখন গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন গোটা স্টেশন। ভেতর থেকে বের হওয়ার রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কারও হাত, কারও পা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এ সময় চোখের সামনে অনেককে মারা যেতে দেখি। এভাবেই বর্ণনা দেন তূর্ণা নিশীথার যাত্রী বশির মিয়া। তার বাড়ি ঢাকায়। তিনি জানান, অন্যদের মত তিনিও ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকট শব্দে তার ঘুম ভাঙে।

কসবার মন্দবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সালাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কান্নার শব্দ। এখানে সেখানে ছিটকে পড়ে আছে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের মরদেহ। এলাকার সবাই বেরিয়ে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করি।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ৩টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক।

মন্দবাগ স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সঙ্কেত) দেয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তূর্ণার গতি ছিল ৮০ কিলোমিটার।

তিনি জানান, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১ নম্বর লাইনে ঢুকছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে আউটারে থাকার সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক সেই সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইনে ঢুকে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তূর্ণা নিশীথার যাত্রী কাজি ফজলে রাব্বি বলেন, উদয়ন এক্সপেস অন্য লাইনে ঢোকার আগেই বিপরীত দিক থেকে এসে তূর্ণা নিশীথা ধাক্কা দেয়। এতে শেষের তিনটি বগিতে আঘাত হানে। ওই সময় আমরাও ঘুমে ছিলাম। দুর্ঘটনার পর তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ি।

উদয়ন এক্সপ্রেসের যাত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রেনটি লাইন ক্রস করছিল। ওই সময় দ্রুত গতিতে এসে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয়। আমি সামনের বগিতে থাকায় বেঁচে গেছি। তবে ‘ঝ’ ও ‘ঞ’ বগিসহ কয়েকটি বগির যাত্রীরা বেশি আহত হয়। আমরাও ট্রেন থেকে নেমে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করি।

দুর্ঘটনার পর কসবা, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জ হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) আহতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ৪০জন ভর্তিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। 

সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে মা, স্ত্রী, মেয়ে, ভাগ্নে বউসহ পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে একই ট্রেনে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)। তিনি জানান, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কারও পা নেই, কারও মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা টেনে আমাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন, পরিবারের বাকি ৪ সদস্য কোথায় আছে, তারা বেঁচে আছে কি-না তাও জানেন না।

উদ্ধার অভিযানকালে দেখা গেছে, রেললাইনে রক্ত আর রক্ত। কোথাও মগজ পড়ে রয়েছে। কোথাও মাংস পিণ্ড। কামরার মধ্যে আটকা পড়ে রয়েছে শাড়ি-সালোয়ার। 

এক স্থানীয় জানান, সংঘর্ষের কারণে পাশের একটি বগি ওপরে উঠে যাওয়ায় অনেকের কান্নার শব্দ শুনতে পান, ভোর রাত হওয়ায় তখন স্টেশনে তেমন লোকজন ছিল না, সময় মতো উদ্ধার না হওয়ায় অনেকেই মারা যান।

সন্ধ্যা নাগাদ নিহতের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান। 

নিহত যারা
মরদেহ শনাক্তে স্বজনের সাথে আঙুলের ছাপ ম্যাচিং করার কাজে সহযোগিতা করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। নিহতরা হলেন- চাঁদপুর হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুল রহমান (৫৫), চাঁদপুরের কুলসুম বেগম (৩০), চাঁদপুরের হাইমচরের মরিয়ম (৪), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫), চাঁদপুরের হাইমচরের কাকলী (২০), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২), হবিগঞ্জের বানিচংয়ের আদিবা (২), হবিগঞ্জের ভোল্লার ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারুরঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহামনি (৩) ও  নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩)।

৮ ঘন্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের সকল প্রকার রেলযোগাযোগ। বন্ধ হয়ে যায় রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে চট্টগ্রামের সরাসরি ট্রেনযোগাযোগও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুমিল্লা, সালদানদী, তালশহর, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর, লোকাল এবং মালবাহী ট্রেন। সকাল প্রায় ৯টায় আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে উদ্ধারকারী ক্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় উদ্ধার কাজ শেষ হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। 

শিশুটিকে দেখে কাঁদছে সবাই 
লাশ ঘরে শিশুটির নিথর দেহ। যেন শুয়ে আছে ফুটফুটে শিশুটি। পায়ে নেইল পলিশ। পোশাক-আশাক পরিপাটি। সদর হাসপাতালের লাশ ঘরে এক নজর শিশুটিকে দেখতে এসে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। শিশু লাশ ঘরে, মা-বাবা ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি। সাধারণ মানুষের আফসোসের শেষ নেই। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা শিশুটির জীবন থামিয়ে দিয়েছে। ১৬ জনের মৃত্যুর তালিকায় ৩ বছরের শিশু ছোঁয়ামনিও রয়েছে। তার বাবা সোহেল মিয়া চট্রগ্রামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ও মা নাজমা বেগমসহ ৩ সদস্যের এই পরিবারটি সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। তাদের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং বড়বাজার এলাকায়।

জীব প্রদীপ নিভে যাওয়ার পর শিশুটির ঠাঁই হয় সদর হাসপাতাল মর্গে আর মা-বাবাকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরে হাবিগঞ্জ এবং সেখান থেকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে শিশুটিকে দেখে অনেক মানুষ সদর হাসপাতালে ভিড় করেন। 

হাসপাতালের ডোম বাদশা মিয়া বলেন, জীবনে অনেক লাশ কাটা-ছেড়া করেছি। কিন্তু এমন একটি শিশুকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখে নি। মনের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। পিঠ ও মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশু- দাবি হাসপাতালের ওই ডোমের। 

উৎসুক জনতা হিসেবে দেখতে এসে চাচা-চাচির মরদেহ আবিষ্কার
উৎসুক জনতা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও এলাকার শাহাদৎ। সেখানে এসে আবিষ্কার করলেন চাচা মজিবুর রহমান (৫০) ও চাচি কুলসুমের (৪৩) মরদেহ। তিনি দেখতে পান অন্যদের সাথে তার চাচা ও চাচির মরদেহ রাখা হয়েছে কসবা উপজেলার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারান্দায়। 

শাহাদৎ জানান, স্থানীয় এক ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর শুনে উৎসুক জনতা হিসেবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান মরদেহ দেখতে। এসেই বারান্দায় আবিষ্কার করেন তার চাচা মজিবুর রহমান ও চাচি কুলসুম মরদেহ। তাদের মরদেগ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। তিনি জানান, চাচা মজিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসা করতেন। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে তিনি ও তার স্ত্রী চাঁদপুরে নিজ বাড়িকে ফিরছিলেন। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাদের ছেলে ফোন দিয়েছে খবর জানতে। আমি এখনও চাচা-চাচির মৃত্যুর খবর বাড়িতে জানাতে পারি নি।

রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলে
দুর্ঘটনাকবলিত স্থান পরিদর্শন করে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তূর্ণা নিশীথার লোকোমোটিভ মাস্টার ও সহকারী মাস্টারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার সিগন্যাল ভঙ করেছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে জেলা প্রশাসন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে উদয়ন এক্সপ্রেসের কোনও ত্রুটি দেখছি না। তিনি প্রত্যক নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহত পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন।

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান দৈনিক জাগরণকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে লাইনে ঢুকে উদয়ন এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দিয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানের উদ্ধার তৎপরতা
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া জীবন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। দৈনিক জাগরণকে তিনি জানান, ঘটনার সময় মন্দবাগ রেলস্টেশনের ৫/৭টি পিকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে ছিল। ঘটনার পরপর সর্বপ্রথম পিকআপ ভ্যানের চালকরাই উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারা দ্রুত হতাহতদের পিকআপ ভ্যানে করে পাশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হতাহতদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য এবং তথ্য দেয়ার মসজিদের মাইক থেকে প্রচার চালানো হয়। যেসব যাত্রী ট্রেনে অবস্থান করছিল তাদেরও খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি। 

অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল উদয়ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের আগে সিলেট থেকে ৭০৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় উদয়ন এক্সপ্রেস। উদয়নের আসন সংখ্যা ১৬টি বগিতে ৬২২টি থাকলেও ঘটনার রাতে মোট যাত্রী ছিল ৭০৩ জন। তার ওপর প্রায় প্রতিটি বগিই ছিল নড়বড়ে।

সূত্র জানায়, উদয়নের ১৬টি বগি রয়েছে। যার আসন সংখ্যা ৬২২টি। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৭০৩ জন। এই রুটের নিয়মিত চলাচলকারী এই ট্রেনটি প্রতিদিনের মতো সোমবার রাত পৌনে ৯টায় ১৬টি বগি নিয়েই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেল স্টেশনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ১৬ যাত্রী নিহত ও শতাধিক আহত হন। 

দুর্ঘটনার পর উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্বল বগি দিয়ে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নড়বড়ে বগি দিয়ে সিলেট রুটে শুধু উদয়নই নয়, সবকটি ট্রেন চলাচল করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়া ডাবল লেন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা) কাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক দৈনিক জাগরণকে বলেন, উদয়নের বগিগুলো পুরান বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় বগিগুলো যুক্ত করা হয়েছে। মূলত তূর্ণার ইঞ্জিন উদয়নের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করেছে। সে কারণে উদয়নের কোচগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা নামে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। উদয়ন ও পাহাড়িকার যাত্রা শুরু ১৪টি বগি নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে এ সংখ্যা কমিয়ে করা হয় ৯টি। তাছাড়া নড়বড়ে বগি দিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে এসব ট্রেনে বগির সংখ্যা ১৬টি করা হয়। 

এসএমএম

আরও পড়ুন