• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম

‘দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় হুমকি’

‘দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় হুমকি’
আলোচনা সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ- ছবি: জাগরণ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি দুর্নীতি।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফিন্যান্সিং অব টেরিরিজম-২০১৯-২০২১’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত ঝুঁকি শনাক্তকরণের জন্য দুদক বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর সহযোগিতায় তিনবার ন্যাশনাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করেছে। এই অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে দুর্নীতিকেই মানিলন্ডারিংয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থপাচার এবং অবৈধ অর্থের প্রবাহই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কমিশন ১৬৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০১.৭৭ মিলিয়ন টাকা (২০.১৮ কোটি) জব্দ করেছে। একই সময়ে ২১টি ভবন/বাড়ি, ২৪টি ফ্ল্যাট, ৭৭ একর জমি, ৫টি বিলাসবহুল গাড়িও ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়াও দুদকের মানিলন্ডারিং মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের আদেশে বাজেয়াপ্তকৃত ৫,৮৪৫.৯৫ মিলিয়ন (৫৮৪.৪৬ কোটি)  টাকা মূল্যের সম্পদ পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল রিকয়েস্ট অ্যাসিসটেন্সের মাধ্যমে দুটি মানি লন্ডারিং মামলায় ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার এবং ০.৮০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড যথাক্রমে হংকং ও বৃটেনে জব্দ করা হয়েছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর আগেও ২.০৬ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার এবং ০.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুনরুদ্ধার করে দেশে আনা হয়েছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিএফআইইউ কখনও কখনও একই  রিপোর্ট একাধিক এজেন্সিকে দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একই অভিযোগ একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে একদিকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে, অন্যদিকে সময় ও কর্মঘণ্টার অপচয়ও হয়। ফলে সার্বিকভাবে মানিলন্ডারিং বিরোধী তৎপরতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক বিশ্বাস করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং হয় বাণিজ্য কার্য প্রক্রিয়ায় ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটিসহ বিভিন্ন সংস্থার বৈশ্বিক সূচকে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ মান্ডিলন্ডারিং হয় বাণিজ্য কর্ম প্রক্রিয়ায়। এ কারণে দুদক একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে তদন্তকে স্বাগত জানায়।

দুদক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ফিনিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট( বিএফআইইউ) এর সংস্কার প্রস্তাব করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আরো কার্যকর হবে যদি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংস্থার কিছু কর্মকর্তাকে এই কর্ম প্রয়াসে সম্পৃক্ত করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানিলন্ডারিং জাতির এক নম্বর শত্রু। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সোনালী ভবিষ্যতের জন্য এসব প্রতিরোধ করতে হবে।

এদিকে, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘সাউথ এশিয়া একাউন্ট্যাবিলিটি রাউন্ড টেবল : প্রোমটিং  একাউন্ট্যাবিলিটি এ্যন্ড ইন্টিগ্রিটি ইন গভার্ণমেন্ট স্পেন্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও প্রশাসন নিয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সুশাসন। এই সুশাসন রাষ্ট্রে একটি আদর্শ সমন্বয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে যা টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায় বিচার তথা সরকার পরিচালনায় ক্রমাগত দক্ষতার দিকে রাষ্ট্রকে ধাবিত করে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সিএজি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় যাতে না ঘটে বিষয়ে কাজ করে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সু-সমন্বয়ের প্রয়োজন।

এ সময় তিনি বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা পাবলিক ফান্ড আত্মসাৎ করেছেন বা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন এমন কোনো ঘটনা যদি অডিটর কর্তৃক উদঘাটিত হয় এবং এই তথ্য বিশ্বস্ততার সঙ্গে কমিশনে পাঠানো হলে- কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় তা অনুসন্ধান করে ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধ করে পাবলিক ফান্ড আত্মসাৎ থেকে রক্ষা করতে পারে।

তিনি বলেন, সিএজি কর্মকর্তারা পোস্ট অডিটের মাধ্যমে যেসব দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটিত করেন এবং সেই রিপোর্টটি  কমিশনে পাঠালে কমিশন তা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। প্রয়োজনে দুর্নীতিপ্রবণ সরকারি দপ্তরসমূহে  দুদক এবং সিএজি যৌথ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে একসঙ্গে প্রি এবং পোস্ট অডিটের মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন শেয়ার করার  মাধ্যমেও পাবলিক ফান্ডের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় যেসব অব্যবস্থাপনা রয়েছে তা চিহ্নিত করে  দুর্নীতি প্রতিরোধে একত্রে কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন,  দুদক ও  সিএজি দপ্তর যৌথভাবে সরকারি ক্রয় এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ করে  মেগা প্রকল্পের ঝুঁকি নিরুপণ করতে পারে। এই প্রতিষ্ঠান দুইটি যৌথভাবে উত্তম চর্চার ভালো উদাহরণগুলোও মানুষেন মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় এবং সমন্বিত উদ্যোগই পারে পাবলিক ফান্ড অপচয়ের পথকে রুদ্ধ করতে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রমুখ।

এইচএস/টিএফ

আরও পড়ুন