• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০১:১৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০১:১৬ পিএম

খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কপালে ভাঁজ 

খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কপালে ভাঁজ 

দেশের পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের কবলে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে এ সিন্ডিকেট। বাজার সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এটা অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি। তবে সাগরপথে ও বিমানযোগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার কারণে দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করছে। আর এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বাজারে। এতে সিন্ডিকেটের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। 

সেপ্টেম্বর থেকে শুরু। মাত্র কয়েক মাসে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের চিবুকটা চকচকে হয়ে উঠেছিল। সেই ভাবটা এখনো আছে। তবে মুখটা মলিন হয়ে গেছে। কারণ পেঁয়াজের দাম এখন অর্ধ্বেক কমে গেছে। 
চার-পাঁচগুণ বেশি লাভ হয়তো এ বছর আর জুটবে না। তাই কপালের ভাঁজটা প্রায় দৃশ্যমান। তাদের শঙ্কা-সাগরপথে পেঁয়াজ এসেই দাম কমে অর্ধ্বেক, আর আকাশ থেকে নামলে কি হবে। আকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এখন সময় কাটছে তাদের। 

এমনটাই জানালেন সিন্ডিকেটের কয়েকজন। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, সাগরপথে পেঁয়াজ আসলেও গুদামে রাখা পেঁয়াজ যাতে লাভেই বিক্রি করা যায়, তা নিয়েও নড়েচড়ে বসেছে তারা। আমদানি করা নতুন পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে পুরনো আধা পচা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মাত্র ১৪ জনের মতো পেঁয়াজ আমদানিকারক রয়েছেন। যারা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে পুরো চট্টগ্রামের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর তারা পাইকারি কেজিপ্রতি ২০-২২ টাকার পেঁয়াজ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ১২০-১৩০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছে। 
মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ খরচসহ ৪২ টাকা কেজি কেনা পড়লেও তা বিক্রি করেছে ২২০-২৩০ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা পর্যায়ে ২৪০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। আর এই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত একের পর এক অভিযান ও সিন্ডিকেটের সাথে মতবিনিময় সভা করে গলদঘর্ম হয়ে উঠে। 

এরপরও সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত স্বাদের সেই পেঁয়াজ সাগরপথে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায় শনিবার। খালাস হওয়ার পর বাজারে পৌঁছায় রোববার। তাতেই সোমবার থেকে বাজারে পেঁয়াজের দাম নেমে আসে অর্ধ্বেকে। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০-১৩০ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা। তবে এ পেঁয়াজ আগের আমদানি করা। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, রোববার পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসা ৮৪ টন এবং চীন ও মিশর থেকে আমদানি করা ১১৪ টন পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। যা খাতুগঞ্জের বাজারে প্রবেশ করেছে। এছাড়া মিশর থেকে বিমানে পেঁয়াজ নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসছে মঙ্গলবার। 

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ খান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস এ প্রসঙ্গে বলেন, পেঁয়াজ সংকটের আগে বাজার যখন স্বাভাবিক ছিল তখন গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। এখন ভারত থেকে পুরোপুরি পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪০০ টন পেঁয়াজ খালাস হচ্ছে।
 
আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরেও খালাস হয় রোববার। এ পেঁয়াজ সারাদেশে নেয়া হচ্ছে। ফলে সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। তবে এ পেঁয়াজ আগের আমদানি করা পেঁয়াজ। আর এতেই সিন্ডিকেটের মুখ মলিন হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। 

খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা জাবেদ ইকবাল বলেন, পেঁয়াজ যা আছে তা বর্তমান চাহিদার হিসেবে পর্যাপ্ত। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে তার সবটুকু বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মজুদও বাড়ছে। ইতোমধ্যে এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এদিকে দেশি পেঁয়াজও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ফলে পেঁয়াজের বাজারে ধস নামবে। 

তিনি বলেন, দাম যদি আরো কমে যায় তাহলে লোকসানের ঝুঁকি বাড়বে। তাই সবার মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে আমদানিকারকরা। 

কেএসটি

আরও পড়ুন