• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০১৯, ১০:০০ এএম

সমঝোতা হয়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠকে 

চালকদের কর্মবিরতি ও গাড়ি সংকটে ভোগান্তি

চালকদের কর্মবিরতি ও গাড়ি সংকটে ভোগান্তি
নাশকতা ঠেকাতে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 

নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালকদের কর্মবিরতি আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এই কর্মবিরতি ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দূরপাল্লার বাস ও প্রাইভেট কারের সংখ্যা আনুপাতিক হারে অনেকটা কমে গেছে। এতে করে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। 

মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীতে চলাচলরত গণপরিবহনের সংখ্যা কম ছিল। এ অবস্থা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  

একাধিক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, নতুন সড়ক আইনের প্রয়োগ শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানার পরিমাণ অসহনীয় বা বেশি হওয়ায় চালক ও মালিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের ভেতরে ভয় ঢুকে যাওয়ায় তারা গাড়ি রাস্তায় নামানো বা চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। 

ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালকদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা পুলিশ সুপারকে জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জেলা পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে সমন্বয় করে মহাসড়ক ও জেলার প্রাণকেন্দ্রে স্পর্শকাতর এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে ক্ষুদে বার্তায় দেশের বিভাগীয় রেঞ্জ ডিআইজি ও প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় পুলিশ, গোয়েন্দা ও র‌্যাব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল থেকেই এ আদেশ কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা।   

নাশকতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাজধানীর প্রবেশপথ মহাসড়কের কাঁচপুরে চিটাগাং রোড, টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর, পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজের পাশে কদমতলী, গাবতলী ও আমিনবাজারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রবেশপথে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান কর্মবিরতি চলাকালে রাজধানীতে কোনো রকম অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ স্থগিত ও সংশোধনের দাবিসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ  ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন ও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। এসময় সংগঠনের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান, সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুকবুল আহমেদ ও যুগ্ম সচিব তালুকদার মো. মনির উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি হচ্ছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ স্থগিত করে মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখপূর্বক সংশোধন করে একটি যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটি, সড়ক পরিবহন আইনশৃঙ্খলা কমিটি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত যেকোনো পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় চালককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনো মামলায় চালক আসামি হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষী নির্ণয় করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কোনো গাড়ির মালিককে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না।

বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত নভেম্বর-২০১৯ এর পূর্ব পর্যন্ত যে সকল পণ্য পরিবহন গাড়ি রফতানিযোগ্য পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে দৈর্ঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা নির্ধারণপূর্বক তৈরি করা হয়েছে সে সকল গাড়ির মডেল থাকাকালীন অবস্থায় চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ও হাইওয়েতে গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সকল জেলা টার্মিনাল ও ট্রাকস্ট্যান্ডে অথবা লোডিং পয়েন্টে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং করতে হবে। বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে অযথা বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ কর্তৃক মামলা করা যাবে না। সহজ শর্তে স্বল্প সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। যে সকল চালক যে সমস্ত গাড়ি চালনায় পারদর্শী সে সকল চালককে সে রকম লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। বর্তমানে হালকা পেশাদার লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি দিতে হবে। জরিমানা মওকুফ করে গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার ন্যূনতম ছয় মাস সময় দিতে হবে। বিগত পণ্য পরিবহন আন্দোলনে ও ধর্মঘটে যে সকল মালিক-শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সকল জেলা শহর ও হাইওয়ে মহাসড়কের পাশে, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ টার্মিনাল, স্ট্যান্ড নির্মাণ করতে হবে। টার্মিনাল নির্মাণের আগে রং পার্কিং (Wrong Parking) এর মামলা দেয়া বা গাড়ি রেকারিং করা যাবে না। সমগ্র বাংলাদেশে একই নিয়মে একই ওজনে ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মোটরযানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী একটি বাস্তবসম্মত বোঝাইকৃত ওজনের হার নির্দিষ্ট করে ওভারলোডিং সম্পূণরূপে বন্ধ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা থাকা যাবে না। প্রতি ১০০ কিলোমিটার পরপর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাপূর্ণ বিশ্রামাগারসহ গাড়ি পার্কিংয়ে রাখতে হবে। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুটপাত, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য ভিন্ন লেন বা রাস্তা তৈরি করতে হবে। নসিমন, করিমন ও ভটভটিসহ সকল রেজিস্ট্রিশনবিহীন যান হাইওয়েতে চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ঐক্যপরিষদের দেয়া অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণায় পরিবহন সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মকবুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অপু বলেন, রাতে ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কিছু নেতার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার মনিপুরীপাড়ার বাসায় মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার সারাদেশ থেকে সংগঠনের নেতারা ঢাকায় আসবেন এবং মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে বৈঠকে কর্মবিরতির বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। 

এইচ এম/ এফসি