• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৯:০৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৯:১৫ এএম

দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : পিএমও

নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। কাজেই আমি চাই, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে নিজের দেশকে গড়ে তুলবেন।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে মাথা নত করে নয়। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে, সম্মানের সঙ্গে চলবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেভাবেই আমরা দেশকে গড়তে চাই। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি এখন ‘বাংলাদেশ’-এই অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন বাজেটের শতকরা ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে।

দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ‘সর্বোচ্চ আন্তরিকতা’ ও ‘নিষ্ঠা’র সঙ্গে ‘সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ’ ও ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টা’র মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সর্বাবস্থায় চেইন অব কমান্ড মেনে ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তাহলে অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী, এটা হতেই হবে। তাই, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষ যেন শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, সে ব্যবস্থাই আমরা করতে চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্রবাহিনীকে ‘দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জনকল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সিলেট, রামু এবং পটুয়াখালীতে তিনটি পূর্ণাঙ্গ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এর ফলে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে।

জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সমুদ্রসীমা আইন করলেও ১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা বাংলাদেশে এই আইন করে যান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের জয়লাভের মাধ্যমে আমরা ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে দু’দফায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্রসীমায় অধিকার লাভ করেছি।

সমুদ্রসীমা নিরাপদ রাখার পাশাপাশি ‘ব্লু ইকোনমি’র সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশীয় শিপইয়ার্ডে যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের প্রচেষ্টা চলচ্ছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পেট্রোলক্রাফট নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি এবং তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান করেছি।

’৯৬ সালে সরকারে থাকার সময় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ স্থাপন (এনডিসি), ওয়ার কলেজ স্থাপন, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এ্যান্ড এ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, বলেন তিনি।

আমাদের মিলিটারি একডেমি সারাবিশ্বে এখন প্রশংসিত এবং এখানে প্রশিক্ষণের জন্য সমগ্র বিশ্বের শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে উন্নত করার পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নের দিকেও আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।
 

এ সময় বাজেট বৃদ্ধিসহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং নিজের দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে চাই।

দেশ পরিচালনায় জাতির পিতার দূরদর্শী নীতি কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্যই ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা।

বঙ্গবন্ধুর সময়ে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নতির জন্য মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ১৯৭৩ সালেই বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক সুপার সনিক মিগ অন্তর্ভুক্তির উল্লেখ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গঠন করার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩টি ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরআগে ১৯৬৬ সালে দেওয়া ছয় দফায় তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় বুঁনিয়াদ তৈরি করে দেন জাতির পিতা।

প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিকদের সহায়তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত নারী সদস্য সহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার ভ’য়শী প্রশংসা করেন।

জাতিসংঘ মিশনে বিশ্বশান্তি প্রচেষ্টার উদ্যোগকালে শাহাদৎবরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামণা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি ।

সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে তার ‘সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধনের’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় ভাই শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। আর ছোট ভাই রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে সে।

প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জনগণের সহযোগিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলায় সহযোগিতার মনভাব নিয়ে পাশে দাঁড়ানো দেশগুলোর প্রতি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সৈনিকদের প্রেরণ করার মাধ্যমে তাঁর সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে আমরা যে স্বীকৃতি পেয়েছি তাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। আর সে সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যখন বাংলাদেশে আর দরিদ্র থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা প্রণয়নে তার সরকারের বর্তমান উদ্যোগ তুলে ধরে নেদারল্যান্ডের সহযোগিতায় শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়নের ও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমরা ২০০৫-০৬ সালের ৪১ শতাংশ দারিদ্র্য থেকে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এটিকে অন্তত ১৫ থেকে ১৭ ভাগের মধ্যে নামাতে পারলে দেশে আর দরিদ্র থাকবে না। আর সেটা বাস্তবায়নেই আমরা সকল কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।

এতে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফ্ফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. অধ্যাপক বদউদ্দোজা চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলনমগীরসহ অন্যান্য বিশিষ্ট রাজনিতিকবৃন্দ, বিদেশি কূটনিতিকবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সম্পাদকবৃন্দ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দ এবং তাঁদের সহধর্মিনীগণ।

পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র সদস্যবৃন্দ, তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বিদেশি কূটনিতিকসহ অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী এরআগে সম্প্রসারিত এবং পুণনির্মিত সেনাকুঞ্জের বর্ধিতাংশেরও উদ্বোধন করেন।

সূত্র: বাসস 

টিএফ

আরও পড়ুন