• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৫:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৬:১৬ পিএম

দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প

রসদ নিয়ে ক্যাম্পে যেতে ধরা পড়লো ৩ জঙ্গি

রসদ নিয়ে ক্যাম্পে যেতে ধরা পড়লো ৩ জঙ্গি
সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম

পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। রসদ নিয়ে সেখানে যাওয়ার সময় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)সদস্যদের হাতে ধরা পড়লো জেএমবির ৩ জঙ্গি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নাশকতায় ব্যবহৃত বোমা তৈরির ডেটোনেটর, জঙ্গি প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম ও আফগানের জঙ্গি গেরিলা প্রশিক্ষণের বই। 

শায়খ আবদুর রহমানের নিকটাত্মীয়ের আর্থিক সহায়তা, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয়দের সহায়তায় জমি কিনে মাদ্রাসা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন পুরোনো জেএমবির সদস্যরা সংগঠিত হয়ে এই কাজ করছিলেন।তবে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ.হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চান মিয়া এবং রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর। 

সিটিটিসি জানায়, আটকরা পাহাড়ে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি জমি কিনে মাদ্রাসা তৈরি করেছে। সেখানেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট দীর্ঘদিন ধরেই নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবির ওপর বিশেষ নজর অব্যাহত রাখছিল। এরই এক পর্যায়ে গতকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর ভাটারার সাইদ নগর এলাকা থেকে তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পুরনো গ্লোবাল জেএমবির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির আবু রায়হান রয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেল জাতীয় বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান মনিরুল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তারা জানিয়েছে, আবু রায়হান টঙ্গির তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখা পড়া করা অবস্থায় ২০১০ সালে মৃত তালহা এবং মৃত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা ও বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে এলাকার দায়ী (দাওয়াতী) শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করেন। ওই সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এক ব্যাগ কমান্ডো ছুরি আবু রায়হানকে দেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতার আবু রায়হান জঙ্গি খোকনের চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। আবু রায়হান ওই ছুরির ব্যাগ কক্সবাজারের নুরুল হাকিমের কাছে দেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নুরুল হাকিম সংগঠনের আরও সদস্যসহ ৩০টি কমান্ডো ছুরি ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হাবিবুর রহমান জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে। সে গত বছরের ২৯ মার্চ রাজধানীর দক্ষিণ খান থানার পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকাতির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সে আবার জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে।

মনিরুল ইসলাম জানান, আবু রায়হান হচ্ছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালানোর সময় পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। ২০১৭ সালে সালেহী নিজেকে গ্লোবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করলে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়। আবু রায়হান গ্রেফতার বাকী দুই জঙ্গি সদস্যকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়। হাবিবুরের বাসা ঢাকাতেই। আর রাজিবের বাড়ি নেত্রকোণার সীমান্ত এলাকায়। তার বাড়িতে নতুন জঙ্গি সদস্যরা সহজেই মিলিত হতো।
গ্রেফতার তিনজন মূলত ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া শায়খ আব্দুর রহমানের মাওলানা রাকীব নামে একজন আত্মীয় বিদেশে থেকে এদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা সব সময় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তবে তাদের নেটওয়ার্ক শুরুতেই ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এরা নব্য জেএমবির সঙ্গে ইতিপূর্বে যোগাযোগ করেছে কিনা তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর নব্য জেএমবির যে গ্রুপটি হামলা চালিয়েছিল, তার প্রত্যেকটি ৫ জনের একটি জঙ্গি সেল করেছে। তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করা গেছে। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী দুজন এখন দৌঁড়ের ওপর আছে। তাদের ছবিও পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের সেই সেল ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। আর নতুন করে যাতে সেল গঠন হতে না পারে সেজন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এইচ এম/বিএস