• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ০৭:১৯ পিএম

৫ হাজার ফ্লাইট বন্ধ

ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ, যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়

ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ, যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়

বিপন্ন প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে শুরু করেছে বিশ্ব। চলতি বছরের মাঝামাঝি গ্রীষ্মকালীন সময়ে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ইউরোপের জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পর এবার শীতের প্রারম্ভেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ভারি তুষারপাত এবং তুষার ঝড়ে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। আকস্মিক ঠাণ্ডার তীব্রতায় দিল্লির তাপমাত্রা এক লাফে নেমে গেছে ৭–৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। বাংলাদেশেও শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরপরই রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২/৩ ডিগ্রি কমেছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থার প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে, শীতের শুরুতেই প্রচণ্ড তুষারপাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ২৭ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষার জমেছে। নিউইয়র্ক রাজ্যের রাজধানী আলবানীসহ বিভিন্ন স্থানে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন গভর্নর। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শীতকালীন এ তুষার ঝড়ে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বয়ে চলা শীতকালীন ঝড় সোমবার (২ ডিসেম্বর) দেশটির পূর্ব উপকূলে আঘাত হেনেছে। প্রচণ্ড তুষার ঝড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক, নর্থ ক্যারোলাইনাসহ নিউ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। নিউইয়র্কের রাজধানী আলবানীর উত্তর-পশ্চিমের শহর ডেলানসনে ২৭ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষার পড়েছে। আলবানী, কলাম্বিয়া, গ্রিনি, রচেস্টার, স্যারাটোগা ও অলস্টার কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। বিবিসি

তুষারঝড়ে প্রায় পাঁচ হাজার ফ্লাইট বাতিল কিংবা দেরিতে যাত্রা শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে নিউইয়র্ক শহরে স্কুল ছুটির সময় তুষারঝড় শুরু হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, আমরা আশা করিনি এমন তুষারপাত হবে। বাইরে বের হওয়ার পর মনে হচ্ছে যেন জমে যাচ্ছি। অবস্থা খুবই শোচনীয়।

নিউইয়র্কে তুষারপাতের সময় বৃষ্টি শুরু হলে তাতে বরফ গলে গিয়ে রাস্তা-ঘাট পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাস্তায় চলাচলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।

গত ১ ডিসেম্বরের থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উদযাপন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আকস্মিক তুষারপাতের কবলে পড়ে নিউ ইয়র্কের কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘ জানজট ও ভারি বরফের নিচে রাস্তা ঢাকা পড়ায় নানা ভোগান্তি সয়ে নগরবাসীকে ঘরে ফিরতে হয়। রয়টার্স  

ডিসেম্বর আসতে না আসতে নিউইয়র্কে শুরু হয়ে গেছে তুষারপাত। শীতের পুরোটা সময় এ তুষারপাত নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রকৃতির এ বৈরি আবহাওয়া প্রবাসীরাসহ সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ বলে মেনে নিচ্ছেন।

চলতি বছর নভেম্বরের শুরু থেকেই তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের জনজীবন বিপন্ন হয়। তুষারপাতের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয় কয়েকটি অঞ্চলে। যাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

এরমধ্যে অ্যারিজোনায় বন্যায় তিন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। বরফে ঢেকে গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলও। উপকূলীয় ঝড়ের কারণে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি তুষারপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, তুষারপাতের পাশাপাশি তীব্র ঠাণ্ডা জেঁকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতেও। এরমধ্যে গত দুই দিনে ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে ৩০ ইঞ্চি বরফ জমেছে। 

বরফের কারণে ক্যালিফোর্নিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে সংযুক্তকারী গ্রেপভাইন হাইওয়ে ১০ ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও কোথাও ৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত বরফ জমেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাদা বরফে ঢেকে গেছে রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি-ঘর। তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল। তীব্র ঠাণ্ডার পাশাপাশি ঝড়ো বাতাসে নাকাল জনজীবন। ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন অংশে তাণ্ডব চালিয়ে তুষারঝড়টি এখন এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের দিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, তুষারঝড়ে মিনেসোটা, উইসকনসিন ও এবং আপার মিশিগানে ছয় থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত বরফ জমতে পারে। তুষারপাতের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। দ্য মর্নিং পোস্ট

এ ছাড়া ঝড়ো আবহাওয়ায় ডেনভার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তুষারঝড়ের সতর্কতার কারণে অনেকেই আগেভাগেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আগামী কয়েকদিনে কয়েক লাখ মানুষের চাপে ভ্রমণে মারাত্মক জট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।

তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, তীব্র শীতের এই পূর্বাভাস এরইমধ্যে বার্তা পাঠিয়েছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও। ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিপ্রলয়ে টালমাটাল ভারত ও বাংলাদেশের উপর এবার প্রকৃতি যে তীব্র শীতের প্রকোপ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে তা বেশ ভালভাবেই টের পাইয়ে দিচ্ছে হাড় কাঁপানো তীব্র হিমেল হাওয়া।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভারতীয় বার্তা সংস্থা দৈনিক আজকালের তথ্য মতে জানা যায়, এদিন সকাল থেকেই জোরদার হতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। আকস্মিক ঠাণ্ডার তীব্রতায় দিল্লির তাপমাত্রা এক লাফে নেমে গেছে ৭–৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। 

দিল্লির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাপমাত্রা নামছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে। কলকাতায় এক ধাক্কায় পারদ নামল ৩ ডিগ্রি। মঙ্গলবার পারদ গিয়ে দাঁড়াল ১৬ ডিগ্রির কাছে। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি। আগামী দু’‌দিন এই রাজ্যে শীতল হাওয়ার প্রবাহ বাড়তে পারে। এমনটাই জানিয়েছে আজকাল।

এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বরাত দিয়ে সূত্রের খবর বলা হয়, দু'একদিনের মধ্যেই কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা আরও নামতে পারে। তবে তা দু’তিনদিনের বেশি স্থায়ী হবে না। তারপর আবার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে অল্প অল্প করে। কিন্তু পরপর ধেয়ে আসা অসময়ের পশ্চিমী ঝড়ের মাঝেই এই রাজ্যসহ পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে উত্তর–পশ্চিমের শীতল বাতাস বয়ে যেতে পারে। ফলে সাময়িক হলেও তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। এতে করে আগামী কয়েক দিনে তা ১২–১৩ ডিগ্রিতেও নেমে যেতে পারে।

ভারতের মত অনেকটা আকস্মিকভাবেই বাংলাদেশেও শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরপরই রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২/৩ ডিগ্রি হ্রাস পায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে শীতের মাত্রা, সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়ার দাপটও বৃদ্ধি পায়।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে চলতি মাসে দেশে এক বা একাধিক মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে । 

আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি এবং মাসের শেষভাগে দেশে এক বা একাধিক মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। আজ ঢাকাসহ সারাদেশের তাপমাত্র ১ থেকে ২ ডিগ্রি হ্রাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।

আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা গামী কয়েকদিনে ক্রমান্বয়ে সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

এসকে/ এফসি

আরও পড়ুন