• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৮:৩৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৮:৩৯ এএম

ট্রাক্টর ব্যবহারে হয়রানি, উত্তরাঞ্চলেই বিক্রি কমেছে ৫৫ ভাগ

ট্রাক্টর ব্যবহারে হয়রানি, উত্তরাঞ্চলেই বিক্রি কমেছে ৫৫ ভাগ

কম সময়ে কম খরচে অধিক জমি চাষে সামর্থবান কৃষকদের অনেকেই ব্যবহার করেন ট্রাক্টর। লাঙল দিয়ে বহু শ্রমে হাল চাষের বিকল্প হিসেবে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জমি চাষে বাড়ছিল এই প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে ট্রাক্টর ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা না থাকার সুযোগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের কারণে জমি চাষে ট্রাক্টর ব্যবহার পড়েছে হুমকির মুখে। গত এক বছরে ট্রাক্টর বিক্রির হার কমে গেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। ট্রাক্টর আমদানি ও বিক্রেতাদের সূত্রে মিলেছে এমন তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর শুধু উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাতে বিক্রি হতো সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ট্রাক্টর। কিন্তু ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকদের পদে পদে হয়রানি করার ফলে এ অঞ্চলে ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের কৃষি এখনও শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আসেনি। তাই চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো ও মাটির গুনাগুন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর। তাছাড়া শ্রমিক সংকট মেটাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে যন্ত্রটি। জমি তৈরি ছাড়াও কৃষি পণ্য পরিবহন ও বহুমূখী ব্যবহারে কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস ট্রাক্টর। কিন্তু কৃষকরা নানা ধরনের হয়রানির মুখে পড়ে ট্রাক্টর ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। 

রংপুর পীরগঞ্জের কৃষক মো. বুলবুল হোসেন জানান,  ট্রাক্টর ব্যবহার করে আমি নিজের জমি ছাড়াও অন্যদের জমি চাষ করতাম। ছোট-খাটো কিছু পরিবহনের কাজও করতাম ট্রাক্টর দিয়ে। তবে ঝামেলায় পড়তে হয় ট্রাক্টরে তেল ভরতে। তেল ভরতে শহরে যেতে জেলা সদরের সড়কে উঠলেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। পরিস্থিতি এখন এমন যে,  ট্রাক্টর ব্যবহার করে চাষই বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
 
গাইবান্ধা সদরের মাজেদ বেপারী বলেন, ট্রাক্টর ব্যবহার করতে গিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এ সব দেখে হয়রানির ভয়ে অনেকেই এখন আর ট্রাক্টর কিনতে চাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ তিন মাসই হলো ট্রাক্টর বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। সারা দেশেই এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। উত্তরবঙ্গে কৃষকের সঙ্গে চলমান ঘটনায় এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাক্টর চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে তা সময় দিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে। চালকদের লাইসেন্সিং করা এবং গাড়িগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কৃষকের মনে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে যান্ত্রিকীকরণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। কৃষিখাত বিপাকে পড়তে পারে। 

এগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক্টর কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। চলতি বছরে নতুন অনুষঙ্গ উত্তরাঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ। গত কয়েক মাস ধরেই চলতে দেওয়া হচ্ছে না ট্রাক্টর। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা, তেলের পাম্প থেকে তেল নিতে গেলে কিংবা কোনভাবে সড়কে উঠলে আটক করা হচ্ছে ট্রাক্টর। পাশাপাশি মোটা অঙ্কের চাদা দাবি করা হচ্ছে। বিক্রি বন্ধ থাকলে সরকারের যান্ত্রিকীকরণে চলমান ভর্তূতি কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে। তাই ট্রাক্টর মালিকদের এক বছরের মধ্যে ট্রাক্টরগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে। কিভাবে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যায়- এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। 

জানা গেছে, দেশের বাজারে ট্রাক্টর সংযোজন আমদানি ও বিপনন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে, এসিআই মোটরসের সোনালিকা, র্যানকন ও কর্ণফূলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের এসকর্ট ও এনার্জিপ্যাকের জন ডিয়ার ব্রান্ড।

এইচএস/বিএস