• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:৩২ পিএম

 আসকের তথ্য

১১ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৩৬২, গুম ১৩

১১ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৩৬২, গুম ১৩
লালমাটিয়ার মূল সড়কে আসকের মানববন্ধন -ছবি : জাগরণ

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত  সারাদেশে ৩৬২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের এবং ১৩ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

সংগঠনটি জানায়, এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে যা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। 

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে লালমাটিয়ার মূল সড়কে এক মানববন্ধনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন শিপা হাফিজ নিপু, নীনা গোস্বামী।

এ সময় অভিযোগ করা হয়, কার্যকর জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র আরও বেশি প্রসারিত করছে।  

জানানো হয়, এ বছর এখন পর্যন্ত ১৩ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জন ফিরে এসেছে আর একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এসবের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা এবং এর ধরন চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গত এগারো মাসে ১৩৫১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ৯৪০ জন শিশুও ধর্ষিত হয়েছে। ৪৪৩ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে এবং ৬৮২ জন শিশু নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনাসমূহের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের অভাব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে দুরূহ করছে এবং দুর্বৃত্তদের আরও বেশি বেপরোয়া করে তুলছে।

আরও বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও বহুল সমালোচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অনুরূপ ধারা রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার রোধ হয়নি বরং আরও  নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।  জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার সর্বোপরি মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাসমূহ জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, দায়িত্বে অবহেলা ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সাথে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। নাগরিকদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার যাতে খর্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের ভয়ভীতি কিংবা প্রতিহিংসার শিকার হওয়া ছাড়াই নাগরিকরা যাতে এ অধিকারসমূহ চর্চা করতে পারে সে পরিবেশ তৈরীর ওপর জোর দিতে হবে। গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা বন্ধে কার্যকর সচেতনতামূলক ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। নারীর প্রতি সকল বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত সনদের ধারা ২ এবং ১৬ (গ) থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করা হবে। প্রতিবন্ধী, ইনডিজিনিয়াস, দলিত, তৃতীয় লিঙ্গ, অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পূর্ণ চর্চা নিশ্চিত এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

টিএস/একেএস