• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৪:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৫:৩৭ পিএম

অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার দাবি

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন অধ্যাপক অজয় রায়

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন অধ্যাপক অজয় রায়
অধ্যাপক অজয় রায়ের মরদেহে জনসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন- ছবি : কাশেম হারুন

শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হলেন প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী, লেখক, গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক অজয় রায়। তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন হয় অধ্যাপক অজয় রায়ের নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় এ আয়োজনে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সেখানে দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, অভিনেতা, রাজনীতিক, শিক্ষক, নাট্যকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ এসেছিলেন। 

উপস্থিত বরেণ্য ব্যক্তিরা বিখ্যাত এই মানুষটির কৃতিত্ব যেমন স্বীকার করলেন তেমনি বললেন, ছেলে অভিজিৎ রায় হত্যার দুঃখ নিয়েই চলে গেলেন সমাজমনস্ক এই ব্যক্তিত্ব। যার আলোয় আলোকিত হয়েছেন আমাদের সমাজের অনেকেই। তাদের কয়েকজন শহীদমিনারে প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, সমাজ হিতৈষী এ মানুষটির থেকে আগামীর বাংলাদেশকে শিক্ষা নিতে হবে, যার মধ্য দিয়ে তারা শুদ্ধ মানুষ হতে পারবে। অনেকে অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার চাইলেন। অজয় রায়ের নামে রাজধানীর একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানালেন।    

গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক অজয় রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বারডেম হাসপাতালের হিমাগার থেকে অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার বেইলি রোডের বাসভবনে। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শুরুতেই সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এসময় দেশের কৃতি এই সন্তানকে সশস্ত্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।  

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অজয় রায়ের নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান। অজয় রায়কে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছিলেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর অসীম কুমার উকিল, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শামসুন্নাহার চাঁপা, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবির কাওসার, বাংলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল, অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, জাসদের পক্ষে দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ অন্যরা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, যুব মৈত্রী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), আদিবাসী ফোরাম, ঐক্য ন্যাপ এর পক্ষে পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ দলের অন্যরা, বাসদ (খালেকুজ্জামান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুসহ অন্যরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শিক্ষকবৃন্দ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণ সংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

অধ্যাপক অজয় রায় কর্মজীবন ও দেশের প্রতি তার একনিষ্ঠতা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কালের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের একজন ছিলেন। তার পুত্রকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটা আমাদের গোটা জাতির জন্য মর্মান্তিক। তিনি বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। মামলা আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মামলার রায় কী হয় আমরা দেখবো। তবে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা উন্নত না হলে দেশের জঙ্গিবাদী হত্যা বন্ধ হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোতে যত দিন পর্যন্ত গণহত্যা চলবে, আমেরিকান সৈন্য, ব্রিটিশ সৈন্য থাকবে ততদিন বিশ্বে শান্তি হবে না। আমরা চাই,অধ্যাপক অজয় রায় ও অভিজিৎ রায়ের স্মরণে এটা বলতে যে, বিশ্ব শান্তির জন্য যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, অজয় রায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান চর্চায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। বাংলা একাডেমি বিশেষভাবে তার অভাব অনুভব করবে। যার বিকল্প হিসেবে চিন্তার কোনো ক্ষেত্র আমাদের নেই। আমাদের ভাষা এবং সাহিত্যের পাশাপাশি তাকে বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। আমরা মনে করি, অধ্যাপক অজয় রায় একজনই, তার কোনো বিকল্প নেই।    

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, অজয় রায় বিশ্বমানের একজন বৈজ্ঞানিক, নৃতত্ত্ববিদ ছিলেন। আমাদের যে বাংলা সাল চালু হয়েছে, এর ইতিহাস রচনা ও প্রবর্তনে তার অবদান রয়েছে। দ্বিতীয়ত বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস তিনি ও আমি বাংলা একাডেমি থেকে ৪ খণ্ড সম্পাদনা করেছি।    

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষানীতি প্রণয়নে তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অন্যতম। তিনি সৎ, সাবলীল অথচ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের যে ক্ষতি হলো তা অনেকদিনেও পূরণ করা সম্ভব হবে না।

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম বলেন, আমি অজয় স্যারের প্রত্যক্ষ ছাত্রী। দীর্ঘ ৫০ বছর তার সঙ্গে আমার পরিচয়, ওঠা-বসা। ’৬০-এর দশকে আমরা যখন আইয়ুব-মোনায়েম খানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতাম, তখন যে কয়জন মানুষ আমাদেরকে প্রেরণা জোগাতেন অজয় স্যার তাদের মধ্যে অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সকল সংগঠনের সঙ্গে তিনি সবসময় ছিলেন। তিনি সব আন্দোলনে নির্ভয়ে ছুটে যেতেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্ত চিন্তার জগতে তার বিশাল অবদান রয়েছে। তিনি ও তার ছেলে অভিজিৎ রায় লিখেছেন। এ কারণেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা বার বার তারা হামলার শিকার হয়েছেন। তারা তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছে। তারা অজয় রায়কে হত্যা করতে পারেননি কিন্তু অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আজকে অজয় রায় আমাদের মাঝে আর নেই। তার লেখাগুলো আছে, তার বিশাল কর্মজজ্ঞ আছে। দেশের তরুণ নেতাকর্মীদের জন্য আমি মনে করি এটা একটা বিশাল প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। শারিরীকভাবে তিনি আমাদের সঙ্গে না থাকলেও তার রচনাবলি ও আদর্শ সবসময় আমাদের অনুপ্রেণিত করবে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরুদ্ধে ও একটি ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ার জন্য। ‘বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি চলতে পারে না’- এ কথাটি তিনি বার বার বলতেন। তার প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা জানানো হবে যদি দ্রুত অভিজিৎ হত্যাসহ সব ব্লগার হত্যার বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অধ্যাপক অজয় রায়ের নামে করারও দাবি জানান তিনি।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মানুষ হিসেবে তিনি অসাম্প্রদায়িত চেতনার ধারণ করে মানবতার পক্ষে তার শক্ত অবস্থান রেখেছিলেন। এদেশের ’৫০ ও ’৬০-এর দশকে যারা জ্ঞানের সাধনা করেছেন, তাদের অনেকে সমাজ নিয়ে এত মাথা ঘামাননি। কিন্তু অধ্যাপক অজয় রায়, তিনি জ্ঞানের সাধনাও করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন, দেশের কথাও চিন্তা করেছেন।  সবাই এমন হন না। তিনি আমাদের একজন জাতির বিবেক হিসেবে পথ দেখিয়েছেন। আমরা একজন জাতির বিবেককে হারালাম।
   
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, অজয় রায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পেছনে এ সকল মানুষরাই ছায়া দিয়েছেন। আমাদের এ মানুষদের চিন্তা, চেতনা, আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। আশা করি আগামীর বাংলাদেশ অধ্যাপক অজয় রায়ের মতো শুদ্ধ মানুষদের দেখে তৈরি হবে।

অধ্যাপক অজয় রায়ের ছোট ছেলে অনুজিৎ রায় বলেছেন, ‘আমার দাদা অভিজিৎ রায়ের হত্যকারীদের বিচার হলে বাবা স্বস্তিবোধ করতেন। সেই বেদনা নিয়েই বাবা চলে গেলেন। পিতা হারানোর বেদনা আমি মর্মে মর্মে অনুভব করছি। তিনি শুধু আমার পিতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, লেখক, বুদ্ধিজীবী- সর্বোপরি একজন মুক্তচিন্তার মানুষ।

তিনি বলেন, ইচ্ছা করলে বাবা সপরিবারে বিদেশে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। তিনি সপরিবারে বাংলাদেশে থেকেছেন। তিনি বলতেন, এটা আমার দেশ, আমি দেশ ছেড়ে কেন যাব? মৌলবাদমুক্ত, উদার গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের জন্য বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তার প্রত্যাশামাফিক বাংলাদেশ হলে, তার সকল সংগ্রাম সার্থক হবে। অনুজিৎ রায় জানান, অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, তার মরদেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দান করা। তার ইচ্ছা অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তার মরদেহ দান করা হবে।

পরে শহীদ মিনার থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে বিভাগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে।     

শিক্ষায় অবদানের জন্য একুশে পদক পাওয়া অজয় রায় ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। স্ত্রী শেফালী রায়ও তার দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দান করে গেছেন। 

১৯৩৬ সালে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করা অজয় রায়ের শিক্ষকতার শুরু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। ১৯৫৯ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে। ২০০০ সালে অবসরের পরও ইউজিসি অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ষাটের দশকের শেষে ইউনেসকোর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্রিস্টালোগ্রাফি সেন্টার স্থাপনে অজয় রায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পদার্থবিদ্যায় তার দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতেও আলোচিত হয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় অজয় রায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। কুমিল্লার সোনামুড়া সীমান্তে প্রশিক্ষণ শেষে একাধিক অপারেশনে যোগ দেন তিনি। পরে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের সাম্মানিক সদস্য হিসবে দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেন এবং শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখেন।  স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন অজয় রায়। এছাড়া সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলা ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন মুক্তান্বেষার প্রধান সম্পাদক অজয় রায়ের উদ্যোগেই একুশ শতকের গোড়ায় মুক্তমনা ব্লগ প্রতিষ্ঠা পায়। তিনি ছিলেন ওই ওয়েবসাইটের অন্যতম উপদেষ্টা। পরে তার বড় ছেলে অভিজিৎ রায় মুক্তমনার দায়িত্ব নেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে বেরিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়। সেদিন উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হয়ে হাতের আঙুল হারান অভিজিতের স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও।

এএইচএস/এফসি

আরও পড়ুন