• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০১:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০১:১১ পিএম

কাউন্সিলর রাজিবের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

কাউন্সিলর রাজিবের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
র‌্যাবের হাতে আটক কাউন্সিলর রাজিব - ফাইল ছবি

ক্যাসিনো-বিরোধী শুদ্ধি অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলোচিত কাউন্সিলর ও দুর্নীতি মামলার আসামি তারিকুজ্জামান রাজিবের পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকে জমাকৃত ১ কোটি ১২ লাখ ৩১ হাজার ৩১৮ টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে ওই টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে সম্প্রতি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, জমাকৃত টাকা ব্র্যাক ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখার পাঁচটি হিসাবে, এক্সিম ব্যাংকের রিং রোড শাখা তিনটি হিসাবে, আইএফআইসি ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখার একটি হিসাবে, ন্যাশনাল ব্যাংক মোহাম্মদপুর শাখার পাঁচটি হিসাবে এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখার একটি হিসাবে সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবে জমা ছিল।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর রাজিবের ব্যবহৃত বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি জব্দ করেছিল দুদক। জব্দকৃত গাড়ি তিনটি হলো- ডিফেন্ডার (ঢাকা মেট্রো শ-০০-০৬৬৪) ব্রান্ডের জীপ গাড়ি, রিডো ড্রাইফ ও ব্লু রঙের পিকআপ গাড়ি। গাড়িগুলো মোহাম্মদপুরের বেড়িবাধ ঢাকা কার পেইন্ট এন্ড লেকার সেন্টার নামের একটি গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত গাড়ির মধ্যে ডিফেন্ডার (ঢাকা মেট্রো শ-০০-০৬৬৪) ব্রান্ডের জীপ গাড়িটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। বাকি দুটি গাড়ি রাখা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানায়।

গত ৬ নভেম্বর কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, তার অবৈধ সম্পত্তির মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর প্লটে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। মোহাম্মপুরের কাঁটাসুরের ৩ নম্বর রোডে রাজিবের আরেকটি প্লট আছে। এছাড়া, মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডে দুটি পাঁচ তলা ও চার তলা বাড়ি, একই এলাকার চানমিয়া হাউজিং লিমিটেডে তিন তলা বাড়ি আছে তার। সাত মসজিদ হাউজিংয়ে ১৮ নম্বর (ছায়াবিথি) চার তলা বাড়ির মালিক ইয়াছিন হাওলাদার, যিনি রাজিবের চাচা। রাজিব অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ এসব বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, এসব বাড়ির প্রকৃত মালিক তারিকুজ্জামান রাজিব।

এর বাইরে সিলিকন হাউজিংয়ের শেয়ার হোল্ডার এবং শ্যামলাপুর ওয়েস্টার্ন সিটি লিমিটেডের পরিচালক রাজিবের নামে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৬ নম্বর রোডে ছয় কাঠা জমি আছে।
এজাহারে আরো বলা হয়, রাজিবের চাচা ইয়াছিন হাওলাদার রাজমিস্ত্রি ছিলেন। এর বাইরে তার আয়ের কোনো উৎস ছিল না। যদিও তিনি বর্তমানে নিজেকে ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দেন। তারিকুজ্জামান রাজিব নিজের নামে এবং তার চাচা ইয়াছিন হাওলাদার ও অন্যদের নামে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করে নিজ দখলে রেখে ভাড়াসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করছেন। এসব সম্পদের তথ্য তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি এবং আয়ের কোনো বৈধ উৎস নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা গ্রেপ্তার হন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৬টি মামলা দায়ের করে দুদক।
রাজিব ছাড়া আরো যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন, ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন, কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা করে দুদক।

কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

অপর সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরি, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

এইচএস/বিএস