• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ০৮:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ০৮:১৪ পিএম

পর্যালোচনা

চমক শুধু শাজাহান খানের অন্তর্ভুক্তি

চমক শুধু শাজাহান খানের অন্তর্ভুক্তি
২১তম জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ -ছবি : সংগৃহীত

অনেকেই আশা করছিলেন চমকে ভরপুর থাকবে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। কিন্তু তা হয়নি। ‘চমক’ ছাড়াই ঘোষিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সভাপতিমণ্ডলি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সব কটি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। ৮টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে ৫টিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব পদ শূন্য রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বসে আলোচনা করে পূরণ করা হবে। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮১ জন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৪২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন মুখ দু’জন। তারা হলেন- শাজাহান খান ও মেহের আফরোজ চুমকি।

পদোন্নতি পেয়েছেন ৮জন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিপ্লব বড়ুয়া, নজিবুল্লাহ হিরু, এস এম কামাল এবং মির্জা আজম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঘোষিত কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলিতে সাবেক নৌ মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া তেমন কোনও চমক নেই।

সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বেই দলের নতুন কমিটি আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং পরের বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ।  

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য সভাপতিমণ্ডলি, সম্পাদকীয় পদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। 

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ মোট ৪ জন মন্ত্রী ছাড়া আরও কেউ পদ পাননি।

সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে কোনও ক্ষোভ রয়েছে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দুই-একদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি তবে এই পদে আসার মত আরও যোগ্য ব্যক্তি আওয়ামী লীগে রয়েছে। এ সময় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

দলের ১৯ জন সভাপতিমণ্ডলির সদস্যের সবার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন মুখ তিনজন। তারা হলেন-শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান। বাকিরা আগে থেকেই সভাপতিমণ্ডলির সদস্য।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

সম্পাদকমণ্ডলির মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নতুন মুখ এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম। পুরনোদের মধ্যে রয়েছেন আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সাংগঠনিক পদে তিনটি পদ খালি রয়েছে। পরে এগুলো পূরণ করা হবে।

নতুনদের মধ্যে আইন বিষয়ক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন গত কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য নজিবুল্লাহ হিরু। দফতরের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেয়েছেন গত কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গত কমিটির দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ পেয়েছেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের। মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন মেহের আফরোজ চুমকি। বাকি পদগুলোতে পুরনোরাই রয়েছেন।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিল অধিবেশন শেষপর্বে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

শীতের কারণে এদিন দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় কাউন্সিল অধিবেশনের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়। নতুন কমিটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা বিকালে হওয়ার কথা থাকলেও তা সেরে ফেলা হয় দুপুরেই।

রেওয়াজ অনুযায়ী দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলে মঞ্চে আসেন তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে এ কমিশনের অপর দুই সদস্য ছিলেন উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাইদুর রহমান।

দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আবদুল মতিন খসরু সভাপতি পদে আবারও শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। তাতে সমর্থন দেন সভাপতিমণ্ডলির আরেক সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। অন্যকোনও নামের প্রস্তাব না থাকায় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শেখ হাসিনাকে টানা নবমবারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তিন যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা দলের জন্য এখনও অপরিহার্য। ফলে সভাপতি পদে যে কোনও পরিবর্তন আসছে না এটা আগে থেকেই তারা বলে আসছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে। শনিবার কাউন্সিল অধিবেশনে ওবায়দুল কাদেরকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে সেই উত্তেজনার সমাপ্তি হয়। 

সভাপতি পুর্নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অন্যান্য নেতৃবৃন্দ

নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি—

সভাপতি
শেখ হাসিনা (নবমবার)

সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের (দ্বিতীয়বার)

সভাপতিমণ্ডলির সদস্য
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাহারা খাতুন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মান্নান খান, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, হাছান মাহমুদ এবং বাহাউদ্দিন নাছিম।

সম্পাদকমণ্ডলি 
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম। সাংগঠনিক পদে তিনটি পদ খালি রয়েছে। 

সম্পাদকীয় পদ

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নদী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এবং স্বাস্থ্য ও জনসংস্থা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা।

কোষাধ্যক্ষ পদে নতুন কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। এনএইচ আশিকুর রহমান এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সংসদীয় বোর্ড 
শেখ হাসিনা, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, রাশিদুল আলম।

বাকি নামগুলো পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। 

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড
শেখ হাসিনা, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, মোহাম্মদ নাসিম, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ওবায়দুল কাদের, রাশিদুল আলম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

উপদেষ্টা পরিষদ 
ডা. এস এ মালেক, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রহমত আলী, এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সৈয়দ আবু নসর, সতীশ চন্দ্র রায়, অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, অধ্যাপক ডা. রুহুল হক, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কাজী আকরাম উদ্দীন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. হামিদা বানু, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হোসেন মনসুর, অধ্যাপিকা সুলতানা শফি, এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, গোলাম মওলা নকশাবন্দি, ড. মির্জা এম এ জলিল, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, মে. জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান, ড. গওহর রিজভী, রশিদুল আলম, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, মোজাফফর হোসেন পল্টু, আবদুল বাসেত মজুমদার, মুকুল বোস, সালমান এফ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান এবং জয়নাল হাজারী। 

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন