• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২০, ০৮:৪৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৫, ২০২০, ০৮:৪৩ এএম

উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে সিটি নির্বাচন

উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে সিটি নির্বাচন
(উপরে, বাঁ থেকে) আতিকুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস (নিচে, বাঁ থেকে) তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন
● আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর সুন্দর নির্বাচনের প্রত্যাশা
● বিএনপির দুই প্রার্থীর অভিযোগ 

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের, প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ দেয়াসহ নানা অভিযোগ করছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের বিশ্বাস সুন্দর একটি নির্বাচন হবে। 

শনিবার (৪ জানুয়ারি) মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প’ নামক ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও উদ্যোক্তা সম্মেলন-২০২০ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীতে উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। আমাদের বিশ্বাস সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।’

ক্ষমতাসীন দলের এই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এ অভিযোগ করে তিনি শনিবার বিকালে ইটিআই ভবনে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

অভিযোগপত্রে তাবিথ আউয়াল বলেন, ৪ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর নির্বাচনি এলাকার মধ্যে গুলশান-১ এলাকার গুলশান পার্কে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে একটি নির্বাচনি মঞ্চ করে, মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন ও কর্মীদেরকে ভোটারদের কাছে যাওয়ার জন্য দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন যা সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও গর্হিত অপরাধ বটে। দুঃখের বিষয় আজ আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ লঙ্ঘন করে একটি নির্বাচনি জনসভা করলেন, কিন্তু আপনার অধীনস্ত কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই বিধিমালা লঙ্ঘনকারী প্রার্থীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টাও করেননি। সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি-৫ অনুসারে প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনি প্রচারণা করতে পারবে না।

আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নির্বাচনি ক্যাম্পেইন করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্বাচনের জন্য সেন্ট্রাল থেকে এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলো নির্বাচনি প্রচারণার পরিকল্পনা শুরু করেছে। একটি সুন্দর নগরী গড়ার জন্য কীভাবে কাজ করতে পারি, কীভাবে আমরা জনগণের কাছে যেতে পারি এবং জনগণের প্রত্যাশা কী, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।

শনিবারই গুলশান-১ এলাকা ছাড়াও মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া শেষে আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নির্বাচনি ক্যাম্পেইন করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্বাচনের জন্য সেন্ট্রাল থেকে এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলো নির্বাচনি প্রচারণার পরিকল্পনা শুরু করেছে। একটি সুন্দর নগরী গড়ার জন্য কীভাবে কাজ করতে পারি, কীভাবে আমরা জনগণের কাছে যেতে পারি এবং জনগণের প্রত্যাশা কী, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তার নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছি। আমি ব্যক্তি আতিক নই, আমি নৌকার প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন মেয়র নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানাই।

নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে আতিক বলেন, যত বেশি প্রচার হবে, সরকারের উন্নয়ন বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছানো যাবে, ততই জনসমর্থন বাড়বে এবং নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিন বিকালে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমের অফিসে তাবিথ আউয়ালের লিখিত অভিযোগ জমা দেন তার প্রতিনিধি মো. জুলহাস উদ্দিন। অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. জুলহাস বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম শনিবার সকালে গুলশান-১ পার্কে নির্বাচনি মঞ্চ করে মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষ থেকে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। সেই এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট যিনি আছেন আমি তার কাছে এটি পাঠাব, সেটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলব। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা চাপ দিচ্ছে। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব অভিযোগ করেন। এর আগে, রাজধানীর গোপীবাগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি, গ্রেফতার এবং হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান তিনি।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা চাপ দিচ্ছে। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব অভিযোগ করেন। এর আগে, রাজধানীর গোপীবাগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি, গ্রেফতার এবং হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব ও রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। অভিযোগের বিষয়ে ইশরাক হোসেন রিটার্নিং অফিসারকে বলেন, আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা হুমকি, গ্রেফতার এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আপনার কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ জানাতে এসেছি।

জবাবে রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন বলেন, আপনাদের অভিযোগ আমরা গ্রহণ করলাম এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

পরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ইশরাক সাংবাদিকদের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কে বা কারা হুমকি দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে তিনি উল্লেখ করেননি।

আগের দিন শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজে অংশ নিয়ে মুসুল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তাপস বলেন, সিটি করপোরেশন আইনে অনেক ক্ষমতা দেয়া আছে। তাই চাইলে অনেক কিছু করা যায়। কাজে মনোনিবেশ করলে, আত্মনিয়োগ করলে অবশ্যই সম্ভব। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অল্প দিনেই তা প্রমাণ করেছিলেন। আনিসুল হকের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। মেয়র হলে তার দেখানো পথেই হাঁটতে চাই। তিন মাসের মধ্যে নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়ন করব। এছাড়া ৩০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করব। 

নির্বাচন আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের এখনও ৫ দিন বাকি। বিধি অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর ভোটের প্রচারণা চালাতে পারবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দের আগে ও পরে প্রার্থীদেরকে নির্ধারিত আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে মতবিনিময়ের নামে নির্বাচনি বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলছেন। 

দুই সিটি মিলে মেয়র পদে ১৩ জন ও কাউন্সিলর পদে হাজারেরও বেশি প্রার্থী নির্বাচনি লড়াইয়ে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সব প্রার্থীর সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আচরণবিধি ঠিক করে দেয় নির্বাচন কমিশন। বিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়ই বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনসমাগম ঘটিয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। বাকি দিনগুলোতে নির্বাচন কর্মকর্তারা কঠোর হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন