• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৯:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৯:৩৪ পিএম

‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যাংক হতে সরকারের ঋণ বেড়েছে’

‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যাংক হতে সরকারের ঋণ বেড়েছে’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের ধীরগতি দেশের অর্থনীতির ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে না। সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি ঋণ প্রবাহে গতি সঞ্চার হবে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের ফলে তার বিক্রি কমে গেছে। এর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি সংসদে উত্থাপন করেন। প্রতিবেদনে ঋণ প্রবাহ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ২.১২ মতাংশ কম হয়েছে।সরকারি ঋণ প্রবাহ বেড়েছে। বেসরকারি ঋণ প্রবাহ কমেছে।

প্রতিবেদনে ব্যাংকের সুদ হার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে আমানত ও ঋণের সুদের হার কিচুটা বেড়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমানতের সুদ হার ছিল ৫.২৭ শতাংশ। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৫.৬৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের সুদের হার ৯.৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৫৬ শতাংশ। সরকারি ব্যাংক ঋণের সুদের হার কম থাকলেও বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকখাতে ঋণের সুদের হার বেড়েছে।

দেশের মুদ্রাস্ফীতি বিষিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে খাদ্য বর্হিভূত মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থ বছরের মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.৪ শতাংশ।

খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৫.৩৮ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত মুদ্রাস্ফীতি ৫.৬৭ শতাংশ। গত অর্থ বছরে একই সময়ে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫.৬৮ শতাংশ। খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৬.৭৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪.০৭ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেট ঘাটতি ছিল প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৪.৮ শতাংশ। চলতি অর্থ বছর শেষে মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫.২ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র হতে ১.০৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র হতে জিডিপির ৩.৯৩ শতাংশ অর্থায়ন কার হয়েছে।

প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন,২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১৫ দশমিক শুন্য ৩ শতাংশ।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৩ শতাংশ এবং বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.৩ শতাংশ যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছিল ৭.৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম। এ সময়ে কর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে চলতি অর্থবছরে অবশিষ্ট সময় রাজস্ব আহরণের গতি আনবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

চলতি অর্থবছরের নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিজনিত কারণে এনবিআরের তথ্যমতে, প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর কর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৫৯ শতাংশ যা গত একই সময়ে ছিল ১৪.০৯ শতাংশ। সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবাসী আয় বিপুল বেড়েছে এবং আগামীতে এ খাতে প্রবৃদ্ধির মাইলফলক অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আশা প্রকাশ করেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১.৮৩ বিলিয়ন ডলার।

রফতানি আয় ৯.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম প্রান্তিক শেষে রফতানি আয় হ্রাস পেয়েছে ২.৯৪ শতাংশ।

বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা ও অস্থিরতার কারলে রফতানি সামান্য হ্রাস পেলেও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী জানান, আমদানি ব্যয় ২.৫৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

রফতানিমুখী খাতের পণ্য আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় এ সাময়িক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

আমদানি ঋণপত্র খোলা হ্রাস পেয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের হতে কমে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়েছে।

পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের ৫.৪৩ শতাংশ হতে বেড়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে ৫.৫৪ শতাংশ।

এইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন