• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০১:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০১:৪৫ পিএম

নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা

সচল, সুস্থ ও আধুনিক ঢাকা গড়তে চান আতিকুল

সচল, সুস্থ ও আধুনিক ঢাকা গড়তে চান আতিকুল
নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম - ছবি : জাগরণ

নির্বাচনে জয়ী হলে ‘সচল, সুস্থ ও আধুনিক ঢাকা’ গড়তে চান মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এছাড়া কাউন্সিলরদের প্রত্যেক বছর সম্পদের হিসাব দেয়ার ব্যবস্থাও করবেন। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে গুলশানের লেক শোর হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাকালে এই প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেছেন, আমার প্রধান লক্ষ্য আনিস ভাইয়ের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। 

সবাইকে মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে, এ জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকাল সীমাহীন দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কারণে, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি শুধু স্থবিরই হয়নি, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারও বাংলাদেশের মানুষ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।’

তিনি বলেন, ১১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আজ আলোয় উদ্ভাসিত। উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) পূরণে এক রোল মডেল। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০-এ অংশ নিচ্ছি।

আতিক বলেন, আজ সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে পারব।  ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা, যার বাঁকে বাঁকে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংগ্রাম আর বিনির্মাণের গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের মানুষের যাপিত-জীবনে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ শহর আমাদের কাছে বড় আবেগের, বড় ভালবাসার।

তিনি বলেন, একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে শহরের পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি এলাকা, পাড়া ও মহল্লাকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যার ফলে এই নগরীতে বসবাস করা মানুষগুলো সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আমার প্রধান লক্ষ্য, এই নগরীকে কেবল বসবাস উপাযাগী নয়, বরং নগরবাসীর জীবনমানেরও উন্নতি সাধন করা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে দেয়া ইশতেহারের অধিকাংশ কাজই শুরু হয়েছে, উল্লেখ করে আতিক বলেন, আমার গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর ঢাকা গড়ার লক্ষ্য অর্জনে পেশ করেছি আমার ত্রিমুখী ইশতেহার।  চলুন, এক নজরে দেখে নেই একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে আমার পরিকল্পনা।

ইশতেহার:

১. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

২. হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

৩. যানজট নিরসনে DMP, DTCA, BRTA, DSCC, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

৪. প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত পরিকল্পনা— ঢাকা বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের কাজ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা।

৫. নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকা উত্তরে বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিং-এ Digital Push Button Signal নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন।

৬. প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।

৭. আধুনিক নগর-পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ডিজিটাল e-ticketing সেবা প্রদান।

৮. অ্যাপ-নির্ভর সময়সূচি প্রবর্তন এবং সুনিয়ন্ত্রিত ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ।

৯. সাইকেলের জন্য আলাদা লেন (যেখানে সম্ভব) এবং সাইকেল পার্কিং তৈরি করা।

১০. স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন।

১১. নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট বাস স্টপ ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।

১২. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা এবং গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ।

১৩. প্রতিটি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করে সমাধান করা।

১৩. নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।

একটি সুস্থ ঢাকা গড়ার জন্য আতিকুলের প্রস্তাবনা

ক. SAo farga Ho IVM (Integrated Vector Management) aforo DNCC, DSCC WASA, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি কারপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

খ. সবার জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ।

গ. টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে RRF (Resource Recovery Facilities) স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর।

ঘ. নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাইকেন্দ্র স্থাপন।

ঙ. তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে এবং প্রতিবশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বাড়াতে শহরের সব ওয়ার্ডে নিয়মিত পাড়া উৎসব উদযাপন।

চ. DNCC-এবং প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ খড় নির্মাণ।

ছ. বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।

জ. বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

ঝ. প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া।

ঞ. ঢাকা উত্তরের উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় Mist blower এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যম বায়ুদূষণ কমানো।

ট. DNCC এর বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব CRHCC (Comprehensive Reproductive Health Care Center) 49 PHCC (Primary Health Care Center) নির্মাণ।

ঠ. DNCC-এর প্রতিটি ওয়ার্ডে নানাবিধ সুবিধাসম্বলিত ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি করা।

ড. মিরপুরে DNCC এর নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্যপ্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ।


আধুনিক ঢাকা নির্মাণে আতিকুলের পরিকল্পনা
১. সুবীর ঢাকা App এর মাধ্যমে নাগরিকের অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা, যেখানে মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে।

২. বায়ুদূষণ রোধে ইলেক্ট্রিক বাস সার্ভিস চালুকরণ।

৩. ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা প্রদান।

৪. ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক তৈরি। যাতে ব্যবসায়ীদের কোনোপ্রকার অসুবিধা না হয়। 

৫. ডিএনসিসি মালিকানাধীন কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য চলবে স্ট্রাকচারাল আপগ্রেডেশন।

৬. একটি সার্বক্ষণিক Digital Command Center তৈরি; যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, Smart Neighbourhood পরিচালনা ইত্যাদি সম্পন্ন হবে উত্তর ঢাকাকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে।

৭. প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকাকে Smart Neighbourhood ono stis তৈরি। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পাড়া-মহল্লাকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা।

৮. তরুদের অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবাকেন্দ্র গঠন; যেখানে থাকবে হেল্প-ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, স্টার্ট-আপ কো-ওয়ার্কিং স্পেস, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য সুবিধাদি।

৯. কাবের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ।

১০. প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলো আধুনিকায়ন।

এফসি