• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০৯:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০৯:০৭ পিএম

সংঘাতে জড়াচ্ছে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা

সংঘাতে জড়াচ্ছে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠে রাজনীতিতে ততই উত্তেজনা বাড়ছে। প্রতিযোগিতার নামে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যা নিয়ে ছোটখাটো হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তবে এখনও বড় কোনও সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।

নির্বাচনি প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এখনও ‘নমনীয়’ অবস্থানেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের ‘কঠোর নির্দেশ’ও নানা উদ্যোগের প্রতিফলন নেই ভোটের মাঠে। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কঠোর কোনও সিদ্ধান্তের প্রয়োগ দেখাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। এর আগে উপজেলা নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল আওয়ামী লীগ।  

বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ইট ইজ আওয়ার ইন্টারন্যাল মেটার। লিভ ইট টু আওয়ার পার্টি। লিভ ইট টু আওয়ার ডিসিপ্লিন কমিটি। এটা আপনাদের আলোচনার বিষয় হতে পারেন না। এটা ছেড়ে দিন। যাদের বিদ্রোহী বলছেন, তারা তো আর মারামারি করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা নির্বাচনের পরিবেশকে ব্যাহত করছে না। এমন কোনও খবর এ পর্যন্ত আছে?  আমরা অভ্যন্তরীণভাবে এটা মোকাবেলা করছি।

সরেজমিন দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের কেউ কেউ পথসভা করছেন, কেউ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন চাইছেন, কেউ নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করে ভোট চাইছেন।

জানা গেছে, রাজধানীর প্রায় ৭০ টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বেশ কিছু ওয়ার্ডে একের অধিক দলীয় এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় নানান সময় সংঘাত হচ্ছে ও সংঘাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এ সংঘাত বেশি হতে দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই দলীয় প্রার্থীদের কন্ঠে শোনা যায় বিদ্রোহীদের নিয়ে নানা অভিযোগের কথা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে দিকে গুলশানের শহীদ ফজলে রাব্বি পার্কের ভেতরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতেই মারামারিতে জড়িয়েছেন দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা।

জানা গেছে, পার্কের ভেতরে আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বসেছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও গত মেয়াদের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসির। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি চলে। এ সময় কয়েকজনকে বেদম লাঠিপেটা করতেও দেখা যায়। মারামারির মধ্যে পণ্ড হয়ে যায় মেয়র প্রার্থী আতিকের প্রচারসভা। কর্মীরা তাকে ঘিরে ধরে পার্ক থেকে বের করে নিয়ে যান। 

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) গভীর রাতে ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৯ নং ওয়ার্ড, মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল আলিম চৌধুরীর ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নূরুল ইসলাম রতনের লোকজনের হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠে। পরে সেখানে রতনের কয়েকজনকে আটক করে রাখে সলুর সমর্থকরা।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম (রতন) বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, যার ফলে আমার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। যা বিদ্রোহী প্রার্থী সহ্য করতে পারেন না।

তিনি দাবি করেন, মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সংঘর্ষের সময় তিনি মহানগর উত্তরে দলীয় সভাপতি বজলুর রমানের সঙ্গে দলীয় এক বর্ধিতসভায় ছিলেন। সভা শেষে ফিরে এসে তিনি সংঘর্ষের বিষয়টি জানতে পারেন বলেও দাবি তার।  

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশেনে ৪৯ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী সফিউদ্দিন ফনো মোল্লার নির্বাচনি প্রচারণায় একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাইমের সমর্থকরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।  

জানা গেছে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সর্মথকরা একটি মিছিল করতে গেলে তাতে হামলা করে নাঈমের লোকজন। এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারী ১০-১২ জন কর্মী আহত হয়ে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর ঠিক ২ ঘণ্টা পরই নাঈমের লোকজন দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে। এ ধরনের ঘটনা ৪৯ নং ওয়ার্ডে প্রতিদিনই হচ্ছে বলে জানা গেছে।   

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মামুন রশীদ শুভ্র ও শেখ সেকেন্দার। রাজধানীর মালিবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ ও বক্সিবাগ এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং অন্যান্য সমর্থিত প্রার্থী থাকলেও নির্বাচন মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় যে কোনও সময় সেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

১৯ জানুয়ারি (রোববার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭ নং ওয়ার্ডের বিদ্রোহী সাহাবুদ্দিন জনির সমর্থকদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রহমান মিয়াজীর সমর্থকরা। ওইদিন বিকেলে সদরঘাটের সাইকেল মাঠে এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে করে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাবুদ্দিন জনির সমর্থকরা। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর হামলা চালায়। যদিও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রহমান মিয়াজী এটা তার ওপর দোষ চাপানোর জন্য করা হয়েছে বলে দাবি করে বলেছেন, এই অভিযোগ সত্য নয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আগে থেকে বিএনপি-জামায়েতের লোকরা চক্রান্ত করতে পারে। দলটি এরই মধ্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নালিশ শুরু করেছে। আগের মতোই তারা আবার চক্রান্তের পথ বেঁছে নিতে পারে। ঢাকা সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দলীয় প্রার্থীদের কারণে প্রতিটি ওয়ার্ড দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি এসেছে। নিজেদের যোগ্যতা আর সামর্থ্য প্রমাণের লক্ষ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, শুরুতে এমনটা শুরুতে ভাবা হলেও ক্রমেই তা ভিন্নরূপ ধারণ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরোধিতা শুরু করেছেন। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা। 

দলীয় সূত্র জানায়, দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে অন্তত ১০০ সক্রিয় রয়েছেন।

নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরুতে দেখা গেছে, বিদ্রোহীদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা সংখ্যাও হলেও ৫ থেকে ১০ জন। এগুলো হলো- ৪, ৯, ১১, ১২, ১৯, ২৬, ২৮, ৩২, ৩৬, ৩৯, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৬, ৬৭, ৬৯ ও ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড।

ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতেও ৫ থেকে ৯ জন করে প্রার্থী ভোট করছেন। এই ওয়ার্ডগুলো হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ২৩, ২৫, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪৩, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড।

বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন সংসদ সদস্যের ছেলেও। প্রথমে তিন শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও গত ৯ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে অন্তত দুইশ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই কোনও কেন্দ্রীয় নেতা, না হয় সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কোনও কোনও শীর্ষ নেতার প্রশ্রয়েই মাঠে রয়ে গেছেন বলে তৃণমূলের ধারণা।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন