• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০, ০৯:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০, ০৯:০০ পিএম

শহীদ দিবসে প্রধানমন্ত্রী

ইংরেজি উচ্চারণে যারা বাংলা বলে, তাদের প্রতি করুণা হয় 

ইংরেজি উচ্চারণে যারা বাংলা বলে, তাদের প্রতি করুণা হয় 
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : টিভি থেকে নেয়া

বাংলাদেশের মাটিতে বড় হয়ে যারা বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজি উচ্চারণে কথা বলে, তাদের জন্য করুণা করা ছাড়া কিছুই বলার নেই। দেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাংলা উচ্চারণের দৈন্য দশা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে একথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়রি) বিকালে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সব মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। 

রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিদ পবিত্র সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষার ওপর ১৯৪৭ সালে যে চক্রান্ত শুরু হয়, এরই ধারাবাহিকতায় আসে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। এসময় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন বাংলা ভাষার বন্ধুর ইতিহাস। তিনি বলেন, মাতৃভাষায় আঘাত করার মধ্য দিয়ে, বিভিন্ন সময়ে আঘাত করা হয়েছে বাঙালি জাতিসত্তা ও অস্তিত্বের ওপর।

ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার সাম্প্রতিক প্রবণতার কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য অন্য ভাষার শেখার প্রয়োজন আছে। তবে সেটা মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়।

তিনি বলেন, এখনকার সময়ের অনেক ছেলেমেয়েকে দেখা যায় ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টা করে। বাংলা বলতে তাদের কেমন যেন কষ্ট হয়। অথচ তারা এই দেশের আলো বাতাসে, এই দেশের মাটিতেই বড় হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন প্রবাসে নির্বাসিত জীবন যাপনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরিবারের অনেককে ছোটবেলায় বিদেশে থাকতে হয়েছে। তবু আমরা তাদেরকে বাংলাটা গুরুত্ব দিয়ে শিখিয়েছি। যেন তারা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে এবং তারা বলেও। তাদের উচ্চারণে যদি কোনো সমস্যা হয় সেখানে দোষ ধরার কিছু নেই। 

তিনি বলেন, আমার বরং নিজের দেশের, নিজের গ্রামের কথা বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য। বক্তৃতায় আমরা গোপালগঞ্জের ভাষা আর ঢাকার ভাষা মিলিয়েই বলি। কারণ ছোটবেলায় চলে এসেছি ঢাকা শহরে, সেই ভাষার প্রভাব। আর টুঙ্গীপাড়ার মাটিতে জন্ম নিয়েছি সেটা একটা প্রভাব, সব মিলিয়েই বলি। এর মাঝে কোনো লজ্জা নেই।

বাংলার আঞ্চলিক ভাষার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয় ভাষণগুলোর প্রসঙ্গ টানেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার ভাষণে একেবারে গোপালগঞ্জের শব্দগুলো তিনি বলে গেছেন অকাতরে যা মানুষের ভেতরে একটা আবেদন সৃষ্টি করেছে। তিনি খুব দ্রুত মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে পেরেছেন। এ কারণে তিনি যখন নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৫ বছর মেয়াদের শেষ দিকে এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও পরে সরকার পরিবর্তনে কাজ থমকে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ইনস্টিটিউটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়।

সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল (বিএনপি) তারা এই ইনস্টিটিউটের কাজে আর গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমি আবার শুরু করেছি। আমার জন্য এমন একটি কাজ রেখে দেয়ার জন্য বিএনপি নেত্রীকে ধন্যবাদ। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোন কোন ভাষা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেখানো হবে ইনস্টিটিউট সেই সিদ্ধান্ত নেবে। যারা শিখবে তারা টাকা দিয়ে পড়বে। পাশাপাশি স্কলারশিপও দেয়া হবে।

ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে জাতির পিতার ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা ভাষাকে। ১৯৫২ সালে পিকিং শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পর জাতির পিতা সেখানে বাংলা ভাষাতেই বক্তব্য রেখেছিলেন। একইভাবে জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমিও জাতিসংঘে বাংলাভাষায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি।

এফসি