• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২০, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৩, ২০২০, ১০:২৩ পিএম

কোভিড-১৯

গণপরিবহনে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি

গণপরিবহনে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি
গণপরিবহনের ভেতরকার দৃশ্য ● ফাইল ছবি

কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দেশব্যাপী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে গণপরিবহন ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা কিন্তু,দেশের গণপরিবহনগুলোতে সেভাবে প্রতিরোধমূলক কোনও ব্যবস্থা নজরে আসেনি এখনও। যা প্রচণ্ড উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচনা করছে সাধারণ মানুষ।

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে মানূষের বিচরণ হ্রাসা পাওয়ায় যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমে এলেও এখনও বহু মানুষ পরিবহগুলোতে চলাচল করছেন। এক্ষেত্রে এই সংক্রামক ভাইরাসটির বিস্তার লাভের ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় জীবাণুনাশক স্প্রে করে পরিবহগুলোতে সতর্কতা অবলম্বনের পদক্ষেপ চোখে পড়োলেও অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আ অনুপস্থিত। ফলে,গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির সম্ভাবনা অত্যাধিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গণপরিবহন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। কিন্তু,গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ভিড়ের কারণে করোনায় সংক্রমণের প্রচুর ঝুঁকি এখন অব্যাহত। বাসে যাত্রীরা গা ধাক্কাধাক্কি করে উঠছেন। এ সময় বাসের হাতল, সিটের হেলানের অংশ ও ছাদের সঙ্গে যুক্ত সহায়ক হ্যান্ডেলে স্পর্শ করোতে হচ্ছে তাদের। আবার পরিবহনের চালক ও কর্মীসহ অনেক যাত্রীর মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার করছেন না। যা এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুন। যাত্রীরা বাসে উঠে খালি সিটে বসে পড়ছেন। সিট খালি না পেয়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন দাঁড়িয়ে। মাথার ওপর মরিচা পড়া রডই তখন পতন ঠেকাতে ভরসা। অথচ নিরাপত্তার আশায় আকড়ে ধরা সেই অবলম্বনই হয়ে ওঠতে পারে তার মৃত্যুর কারণ।

এই বাসগুলোর অধিকাংশেরই সিট ছেঁড়া তেল–চিটচিটে। ফাঁকে ফাঁকে ছারপোকার বসবাস। জানালার কাচ ভাঙা। পাটাতনে ধুলো-ময়লা। বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে আছে উচ্ছিষ্ট কাগজের টুকরা, সেই সঙ্গে ঘামের ভ্যাপসা গন্ধ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ছাপ নেই কোনো কিছুতেই। এমন একটি পরিবেশ করোনার মত শক্তিশালী ও প্রাণঘাতি ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করোতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও হাঁচি বা কাশিতে থাকা জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শকৃত স্থান থেকেও এর বিস্তার ঘটে। ভাইরাসটির অস্তিত্ব যেহেতু সবচেয়ে সক্রিয় থাকে লোহা ও কাঁচের গায়ে; সেক্ষেত্রে গণপরিবহনগুলোর এই পরিবেশ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তাবলার অপেক্ষা রাখেনা। 

বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ,তবে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এ দেশের মানুষ প্রতিদিন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচলের জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বুকে মানুষ অফিস-আদালত থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যার যার নিজস্ব কর্মস্থল ছাড়াও বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে গণপরিবহনের ওপর বেশি নির্ভর করে। এছাড়া ট্রেন বা জলজ পরিবহণগুলোর ক্ষেত্রেও জনসমাগম নেহায়েত কম নয়। সেই সঙ্গে বর্তমানে বহুল জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিংয়ের কাজে নিয়োজিত পরিবহণগুলোও অনিরাপদ ব্যবস্থাপনার কারণে হয়ে ওঠতে পারে করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাস সংক্রমণে সহায়ক। মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেও রয়েছে যথেষ্ট ঝুঁকি। কারণ,এক্ষেত্রে একাধিক যাত্রী একই হেলমেট ব্যবহার করেন।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব,রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন,গণপরিবহনে মানুষের সমাগম বেশি, মানুষের সমাগম থেকে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় গণপরিবহন ব্যবহার না করা ভালো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে গণপরিবহনগুলোতে কোনো জীবাণূনাশক স্প্রে ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করণ করতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা এই বিষয়ে সরকারকে অবগত করেছি, এটাতো রাষ্ট্রের কাজ। জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করণ করতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতকর্তা করা হচ্ছে। তারপরেও এই সময়টায় গণপরিবহনগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। আর না হলে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে গণপরিবহনগুলোতে জীবাণূনাশক স্প্রে করাটা অতি জরুরি।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি বাহিরের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে যেমন, চীন, ‍ইতালি, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, ইরান, এগুলো দেশ এখন মৃত্যুপুরী। তবুও জনগণের সেবায় কোন ব্যক্তি যখন অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য ফোন করেন তখন দ্রুততার সহিত সেবা চলে আসে। আমাদের দেশে এখন লক্ষ্য করা যায়, সামান্য জ্বর, হাচিঁ, কাশি নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারের সেবা নিতে গেলেই ডাক্তার সেবা না দিয়ে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও মাঠ পর্যায়ে এই যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে রোগির পরিমান বৃদ্ধিমানে সংকট। তাই  গণপরিবহনগুলোতে যে জনসমাগম বেশি, সেটি বিবেচনায় রেখে সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সরকারের পক্ষ থেকে।

চলমান এই সংকটের মাঝে জনসাধারণের নিরাপত্তায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান থেকে কার্যক্রম চালাতে হবে প্রত্যেককে। এসকল সচেতনতামূলক বিষয় আইনি কঠোরতার মাধ্যমে নয় বরং ব্যক্তি সচেতনার মাধ্যমেই কেবল সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। আর তাই জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দূর করতে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেই বিশ্বাস সাধারন মানুষের। পরিবহন সেক্টরের প্রতি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকেও আহ্বান জাননো হয়েছে।

এমএইচএস/এসকে