• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২০, ০৯:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২০, ০৯:০১ পিএম

করোনার মহাবিপদ সংকেত

আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরুতে তৃতীয় দ্রুততম বাংলাদেশ

আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরুতে তৃতীয় দ্রুততম বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

...............

সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস মহামারী। এরইমধ্যে করোনার প্রলয়ে বিধ্বস্ত বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তিগুলো। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, জার্মানির মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর মাতম। লাশ দাফনে স্থান স্বল্পতায় কোথাও কোথাও খোড়া হচ্ছে গণকবর।

এদিকে বাংলাদেশের বুকেও শুরু হয়ে গেছে করোনার তাণ্ডব। সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশের বুকে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে হাজারের কোটায়। আর এই সংখ্যা স্পর্শ করতে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে বহুগুণ বেশি গতিতে ছুটছে বাংলাদেশ। যেখানে এক ইতালি ছাড়া বাংলাদেশের পেছনে পড়েছে বাকিরা।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে ১০১২ জন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০৯ জন। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগি শনাক্তের পর মাত্র ৩১ দিনের মাথায় হাজারের কোটায় পা রাখলো বাংলাদেশ। যে গতিতে এই সংখ্যা বাড়ছে তা এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে কেমন হতে পারে দেশের পরিস্থিতি, তা বুঝে নিতে এক নজরে দেখে নেয়া যাক সুবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোতে এই আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে পৌঁছতে কেমন সময় লেগেছিলো।

যুক্তরাষ্ট্র

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। আর গত ১১ মার্চ দেশটিতে এক হাজার জনে পৌঁছায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।

হিসাব করলে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রের সময় লেগেছে ৫০ দিন। এদিকে, ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল ৩৫ বছর। করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের উহান শহর থেকে পাঁচদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছিলেন ওই ব্যক্তি। আর তাই ২৯ জানুয়ারি ‘হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স’ গঠনের পর ব্যবস্থা নিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এর দুদিন পরই জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসঙ্গে চীন থেকে ফেরা ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়।

তবে ধীরে ধীরে দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃতের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে, রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫২ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ২৩ হাজার ৭৬৫ জনের।

ইতালি

গত ৩১ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় ইতালিতে। এরপর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে এক হাজার জনে পৌঁছায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। সে হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে ইতালির সময় লেগেছে ২৯ দিন। গত ৩১ জানুয়ারি ইতালিতে দুজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। তাঁরা দুজনই চীনা পর্যটক ছিলেন। এর এক সপ্তাহ পরই ইতালীয় এক নাগরিকের দেহে শনাক্ত করা হয় করোনাভাইরাস। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ব্যক্তি চীনের উহান শহর থেকেই ইতালিতে ফিরেছিলেন। পরে ইতালির লমবার্ডি অঞ্চলে ভয়াবহ আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ওই অঞ্চলটি ইতালিতে করোনার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিতি পায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতালিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে এক লাখ ৫৯ হাজার ৬২৮ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ২০ হাজার ৫১৫ জনের।

স্পেন

গত ৩১ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় স্পেনে। দেশটিতে গত ৯ মার্চ এক হাজার পার করে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে স্পেনের সময় লেগেছে ৩৯ দিন। গত ৩১ জানুয়ারি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি ছিলেন একজন জার্মান পর্যটক। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে একাধিক রোগী শনাক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে ওই সময়টিতে ইতালি ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতালিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে এক লাখ ৭০ হাজার ৯৯ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ১৭ হাজার ৭৫৬ জনের।

ফ্রান্স

গত ২৪ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় ফ্রান্সে। গত ৮ মার্চ এক হাজার পার করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে ফ্রান্সের সময় লেগেছে ৪৪ দিন। ফ্রান্সে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়া পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে ওই সময় ইতালি ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৯ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪ হাজার ৯৬৭ জনের।

যুক্তরাজ্য

গত ৩১ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় যুক্তরাজ্যে। আর গত ১৪ মার্চ এক হাজার পার করে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হিসাব করলে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে যুক্তরাজ্যের সময় লেগেছে ৪৩ দিন। ৩১ জানুয়ারি শনাক্ত হওয়া দুজন ব্যক্তি এক চীনা পরিবারের সদস্য। তাঁরা যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক শহরের একটি হোটেলে ছিলেন। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পরই তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হয়। তাঁরা দুজনই ওই সময়ে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ৮৮ হাজার ৬২১ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ১১ হাজার ৩২৯ জনের।

জার্মানি

গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় জার্মানিতে। এরপর গত ৮ মার্চ এক হাজার পার করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হিসাব করলে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে জার্মানির সময় লেগেছে ৪১ দিন। এদিকে জার্মানিতে গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির বয়স ছিল ৩৩ বছর। তিনি ওয়েবাস্তো নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। জানা যায়, এক চীনা সহকর্মীর সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ওই চীনা সহকর্মী এর আগে চীনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে জার্মানিতে ফিরেছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে এক লাখ ৩০ হাজার ৯৯৮ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট তিন হাজার ২২১ জনের।

ইরান

ইরানে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর গত ২ মার্চ এক হাজার পার করে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে ইরানের সময় লেগেছে ১৪ দিন। ধারণা করা হয়, দেশটির কোম শহরের এক ব্যবসায়ী চীন থেকে ভ্রমণের পর ইরানে করোনার সংক্রমণ ঘটিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানেই সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে মৃতের সংখ্যাও অনেক বেশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইরানে সরকারি হিসাব মতে, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ৭৩ হাজার ৩০৩ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট চার হাজার ৫৮৫ জনের।

দক্ষিণ কোরিয়া

গত ২০ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। এরপর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক হাজার পার করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হিসাব করলে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনে পৌঁছাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সময় লেগেছে ৩৭ দিন। ওই সময়ে দেশটির দেগু শহরের একটি চার্চকে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়। ওই চার্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকের মধ্যেই পরে করোনা শনাক্ত করা হয়। শুরুতে অনেক অল্প সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক মানুষের করানো শনাক্ত করে দক্ষিণ কোরিয়া। আর তাই এর সংক্রমণের হার অনেকটাই কমিয়ে এনেছে দেশটি। অন্যান্য দেশের তুলনায় শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা শনাক্ত হলেও ধীরে ধীরে এর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। আর এ জন্য করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের কাছে সমাদৃত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ১০ হাজার ৫৬৪ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট ২২২ জনের।

এই হিসেব বলছে, করোনা সংক্রমণে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হওয়া দেশগুলোর হিসেবে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে পৌঁছেছে তৃতীয় দ্রুততম গতিতে। এই গতি অব্যাহত থাকলে নিশ্চিত লাশের ভারে নুয়ে পড়বে দেশ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্ম চাপিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি সেখানে এখনই সাবধান না হলে বাংলাদেশের পরিণতি কতটা প্রলয়-বিধ্বস্ত হতে পারে, তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরের কর্তৃপক্ষ জানায়, এক নতুন ধরনের রোগের কবলে পড়েছে সেখানকার মানুষে, যার সঙ্গে সামুদ্রিক খাবারের দোকানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এরপর বেইজিং থেকে এক বিশেষজ্ঞ দল যায় উহান শহরে। চলতি বছরের জানুয়ারির ৮ তারিখ জানানো হয় এক নতুন ধরনের ভাইরাসের আবির্ভাব হয়েছে চীনে। আর ধীরে ধীরে তা চীন ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে, যাকে আমরা বর্তমানে করোনাভাইরাস জনিত কোভিড-১৯ রোগ হিসেবে জানি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চীনে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৪ হাজার ৩৯৩ জন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে মোট তিন হাজার ৩৪১ জনের।

এসকে/এসএমএম

আরও পড়ুন