• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২০, ০২:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২০, ০২:২৭ পিএম

ভারতীয় গণমাধ্যম ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর

রোজ দেশে ফোন করাই কাল হল মাজেদের

রোজ দেশে ফোন করাই কাল হল মাজেদের
আবদুল মাজেদের ভারতীয় পাসপোর্ট ● ভারতীয় দৈনিক বর্তমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে শনিবার (১১ এপ্রিল) দিনগত রাতে।

এর আগে রাজধানীর মিরপুরে সন্দেহজনকভাবে রিকশায় ঘোরাঘুরি করছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন তিনি বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি। তাকে গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের এমনটাই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

জানা গেছে, খুনি মাজেদ এতদিন আত্মগোপন করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায়।

কলকাতার গণমাধ্যম বর্তমান পত্রিকার অনুসন্ধানীমূলক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পার্কস্ট্রিটে বসবাস করতেন খুনি মাজেদ। মাজেদের ছবি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে অবাক হয়েছে সেই মহল্লার বাসিন্দারা।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশিত হয়েছে সেই প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে—

দু’টি নম্বরে প্রতিদিন নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী আবদুল মাজেদ। নম্বর দুটি হল +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ এবং +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯। সম্ভবত এই ফোনালাপই কাল হয়ে দাঁড়াল তার জীবনে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, বাংলাদেশে মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে আছে, সেই তথ্য সহজেই জেনে যায় তারা। এরপরই মাজেদকে গ্রেফতারের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়। তবে কলকাতা শহরে মাজেদের অবস্থান জানতে খুব সম্ভবত ভারতের কোনও গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যদিও এ নিয়ে কোনও সরকারই মুখ খোলেনি।

তদন্তে জানা গেছে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন, তার একটিও নিজের নামে ছিল না। তিনি স্ত্রীর নামে সিম কার্ড কিনেছিলেন।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর রাতারাতি দেশ ছেড়েছিলেন মাজেদ। সেই সময় ভারত হয়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে যান তিনি। কিন্তু সুবিধা করতে না পারায় সেখান থেকে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় কি কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিলেন মাজেদ? সঙ্গত কারণেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গোয়েন্দাদের মনে। তার পার্ক স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।

দৈনিক বর্তমান এর প্রকাশিত সংবাদ

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ওই পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিস ভেরিফিকেশন করার পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছেন অনায়াসে। তার আধার কার্ড নম্বর হল ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এছাড়াও ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিলেন।

মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতেন মাজেদ। এমনকী খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেতেন তিনি।

মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে, বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। তাছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। এর মানে মাজেদ স্বেচ্ছাতেই ৪জন ষণ্ডামার্কা লোকের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তবে কি সেদিন মাজেদের পরিচিত কাউকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন গোয়েন্দারা?

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এমনিতে সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজেদ। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত মাজেদের কাছে। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে আর পা দেয়া হল না তার। তার আগেই ফাঁসিকাঠে নিথর হলেন তিনি।ভারতীয় দৈনিক বর্তমান।

 জেডএইচ/এসকে/এসএমএম

আরও পড়ুন