• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২০, ০৫:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০২০, ০৫:০৮ পিএম

কোভিড-১৯

রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে চরম ঝুঁকিতে স্থানীয়রা

রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে চরম ঝুঁকিতে স্থানীয়রা
সাম্প্রতিক ছবি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে খুবই চিন্তিত স্থানীয় লোকজন ও সেখানে কর্মরত সেবা সংস্থাগুলো।

ব্যাপক ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বাস করা ১১ লাখ রোহিঙ্গা করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে আশঙ্কা তাদের।

বিশাল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সাথে বসবাস করছে স্থানীয় আরও অন্তত ছয় হাজারের মত বাংলাদেশী।

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় স্থানীয় অধিবাসী, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আবাসস্থল উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি শরণার্থী ক্যাম্প এমনিতে এইচআইভি, হাম, পোলিও ও নানা রকম চর্মরোগ সহ নানা ছোঁয়াচে রোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। ঘনবসতি ও অসচেতনতার কারণে এখানে করোনাভাইরাসও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্যাম্পের বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মাঝে ভাইরাসের বিস্তার রোধে বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা,মাস্কের ব্যবহার প্রভৃতির চর্চা করা প্রায় অসম্ভব। কারণ প্রতি স্কয়ারমাইলে সেখানে ১ লাখ ৩ হাজার মানুষের বসবাস। অধিক সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে থাকে পরিবারগুলো। ক্ষত বয়ে চলা অপুষ্টির শিকার এই জনগোষ্ঠী গণশৌচারগার ও হাত ধোয়া পদ্ধতির ওপর নির্ভর করা কঠিন।

এমনিতে দৈনন্দিন গৃহকর্মে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পুরোপুরি পায় না রোহিঙ্গারা। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি মেনে চলে না।ক্যাম্পের দোকান-পাট, বাজার, মসজিদগুলোতে অনেকটা আগের নিয়মই ভিড় পরিলক্ষিত। তাদের সরল জবাব ‘আল্লাহ তাদের এ রোগ দিলেও তিনি রক্ষা করবে।’

এলাকার লোকজন জানান, ক্যাম্পে স্থানীয়রা প্রবেশ না করলেও রোহিঙ্গারা যত্রতত্র শিবির থেকে বাইরে আসা-যাওয়া করে থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা এদেশের কোনও আইন-কানুন এমনকি লকডাউনও মানে না। স্থানীয় হাটবাজার-স্টেশন, দোকান-পাট সবখানেই এখন রোহিঙ্গাদের বিচরণ।

এলাকাবাসী আরও জানান, মূলত ৮ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার জেলার সাথে উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরও লকডাউন ঘোষণা করা হলেও শত শত এনজিও কর্মীর অবাধে রোহিঙ্গা শিবিরে যাতায়াত রয়েছে।

উখিয়া ইউএনও মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এমনিতেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। তার ওপর করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় সবাই উদ্বিগ্ন। এসব বিবেচনায় রেখে ক্যাম্পের ১২টি সেন্টারে ১৯০০ জন রোগীকে আইসোলেশনে রাখার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার শুরুতেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে লকডাউন করা হয়েছিল। পাশাপাশি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত। প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বাকি সব কার্যক্রম।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন দৈনিক জাগরণকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় স্বভাবতই উদ্বেগের বিষয়। নানা রোগে আক্রান্ত

বিপুল উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কারণে ইতিপূর্বে বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় কিছু রোগ দেখা যায়। এগুলো অবশ্যই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপদ স্বাস্থ্যের পরিপন্থি বলে তিনি জানান। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ সহ বেশ কিছু দেশি-বিদেশি সেবা সংস্থা এ নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে তিনি জানান।

করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে বৃহত্তম রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্প সমূহ। এ পরিস্থিতিতে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ৩৪টি ক্যাম্পে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা।

রামু সেনানিবাস সূত্র জানায়, করোনা রোধে ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর টহল ও চেকপোস্টের কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার উখিয়াতে ডিজইনফেকশন বুথ স্থাপন করে সব গাড়ী জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করানো হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় প্রদানের শুরু থেকে আমরা স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দেয়ার আহবান জানিয়েছিলাম। আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হলে বর্তমানে এ কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়তো এতটা ব্যাপক হতো না। ক্যাম্প এলাকার অভ্যন্তরে বসবাস করা প্রায় ৬ হাজার স্থানীয় মানুষগুলো এখন চরম ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে বলে তিনি শঙ্কা করেন।

অত্যাধিক রোহিঙ্গার উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সত্যিই আমরা স্হানীয়রা রোহিঙ্গাদের কারণে চরম বেকায়দায় রয়েছি। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট নিয়ে অনেক দেশে অবস্থান করছে। তারা নিয়মিত বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে।

তিনি বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের আওতায় ১৫ টি ক্যাম্পের অবস্থান। এসব ক্যাম্পে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।পাশাপাশি এ ইউনিয়নের ৬৫০ পরিবারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও বসবাস। আমরা এসব লোকজন নিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে চেয়ারম্যান জানান।

একই কথা বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার বখতিয়ার আহমেদ বলেন, কুতুপালং, লম্বাশিয়া, টিভি কেন্দ্র, শাহপরীর দ্বীপ পাড়া, মধুরছড়ায় অন্তত ৩৭০ পরিবারের ১৮০০ জনের মত স্থানীয় লোকজনের বসবাস। এ এলাকা গুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে হওয়ায় এসব লোকজন চরম স্বাস্থ্য ও করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তিনি জানান।

সু শাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের উখিয়া উপজেলা সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, শুরু থেকেই আমরা সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবী জানিয়ে আসছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহিরাগতদের যাতায়াত ও চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে। সেবা সংস্থা গুলোতে কর্মরত কর্মীদের উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার গমনাগমনে কঠোর হতে।

কিন্তু কক্সবাজার জেলা লকডাউনের মাঝেও প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের যাতায়াত ঠেকানো যায়নি। ক্যাম্পগুলোতে যারা রোহিঙ্গাদের কোভি -১৯ সম্পর্কে সচেতন করার কথা, তারা কিন্তু তা আন্তরিক ভাবে করেননি।

এসএমএম

আরও পড়ুন