• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২০, ০১:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৮, ২০২০, ০১:৪৬ পিএম

ঢাকা-৫ উপনির্বাচন

প্রার্থীতার দৌঁড়ে এগিয়ে হাজী আতিকুর

প্রার্থীতার দৌঁড়ে এগিয়ে হাজী আতিকুর

আওয়ামী লীগের অন্যতম পরীক্ষিত নেতা, ঢাকা-৫ আসনের প্রবীণ সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে আসনটি। তাই সাংবিধানিক নিয়মানুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসনটি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে শীঘ্রই। এদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতির মাঝে উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা জোরালোভাবে শুরু না হলেও চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। আসনের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে, দেয়ালে বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটিয়ে প্রার্থিতার প্রত্যাশার কথা জানান দিচ্ছেন অনেকেই। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চোখে পড়ছে জোর প্রচার কাজ।

শূন্য আসনটিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থিতা পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহু নেতৃবৃন্দই। তবে কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র বলছে, এক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্য মতে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীতা চাইবেন অনেকেই তবে দলীয় প্রধান হিসেবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে যাকে প্রার্থী করা সমন্বিতভাবে তার জন্য অন্যদের কাজ করতে হবে।

এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুসারে জানা যায়, ঢাকা-৫ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন, প্রয়াত সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মত প্রবীন ও অভিজ্ঞ একজন জনপ্রতিনিধির উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছেন হাজী মোঃ আতিকুর রহমান আতিক। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় এবং আস্থাভাজন কর্মী হিসেবে নিবেদিত থেকে ক্রমান্বয়ে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে উঠে আসা হাজী আতিকুর দলের একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবেই প্রার্থীতার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।  

সাবেক ছাত্রনেতা হাজী মোঃ আতিকুর রহমান আতিক ডেমরার সন্তান। ঢাকা মহানগর দক্ষিনের অন্যতম প্রধান ইউনিট ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় একজন রাজনীতিক। এছাড়া বিশিষ্ট সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। স্থানীয় সূত্র মতে, বিভিন্ন সময় সাধারণের যেকোনো বিপদাপদে ডাক পড়লে নিবেদিতভাবেই পাশে এসে দাঁড়ান- ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০ নং ওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা কাউন্সিলর হাজী আতিক। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর নেতৃত্বে ডেমরা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার ব্যাপারে সহযোগিতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির ও স্কুল-কলেজ তৈরির কাজে অবদান রাখায় স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার।

দৈনিক জাগরণের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে হাজী আতিকুর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ ও ব্যক্তি দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়েই স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তির বাতিঘর হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে নিবেদিত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি শুরু থেকেই।

বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মী হিসেবে, আওয়ামী লীগের জনবান্ধব রাজনীতির ধারায় নিজেকে ধরে রাখায় প্রচেষ্টার মূল্যায়নও পেয়েছি দলীয় প্রধান, জাতির পিতার আদর্শ উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। দীর্ঘদিন ধরে  মানুষের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছি, নেত্রী (শেখ হাসিনা) এই আসন থেকে মনোনয়ন দিলে তার পূর্ণতা পাবে। সেক্ষেত্রে মানুষের জন্য ও বিস্তৃত পর্যায় থেকে নিবেদিতভাবে কাজ করার সুযোগ পাবো।

দলীয় প্রার্থিতা না পেলে কী করবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাজী আতিকুর বলেন, প্রার্থিতার প্রত্যাশা অবশ্যই আছে এবং আমার বিশ্বাস এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে, যা এক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে বলেই আমি মনে করি। তবে আমার কাছে আমার প্রত্যাশা কখনই আমার নেত্রীর চেয়ে বড় নয়। তাঁর বিচক্ষণতা প্রশ্নাতীত, সে বিশ্বাস আমার অবশ্যই আছে। 

তিনি বলেন, সাংসদ হওয়ার স্বপ্নে আমি নৌকার টিকিট চাই না, আমার ক্ষুদ্র পরিসীমার মাঝে আমি বঙ্গবন্ধুর নৌকার প্রতিনিধিত্ব করার যে স্বপ্ন বুকে লালন করে আসছি, তা সত্য করতে সাংসদ হতে চাই।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উপনির্বাচনে আমাকে নৌকার মাঝি হওয়ার সুযোগ দিলে ঢাকা-৫ আসনকে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাহআল্লাহ।

আমি চেষ্টা করবো প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মত অভিভাবক হারিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ তথা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে অভিভাবক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। 

১৯৬৭ সালে ডেমরার এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আতিক। তার বাবা হাজী এম এ গফুর ছিলেন একজন স্বনামধন্য দানবীর ও শিক্ষানুরাগী।

ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির পথচলা শুরু হয় আতিকের। ১৯৮৩-৮৪ সালে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আতিক। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংগঠিত করতেও অসামান্য অবদান রয়েছে তার।

রাজপথে আওয়ামী লীগের একজন সাহসি নেতা হিসেবে প্রতিটি সংগ্রামে দল ও নেতৃত্বের প্রতি নিবেদিত থেকেছেন হাজী আতিকুর। যার প্রেক্ষিতে অসংখ্যবার তাকে বিএনপি-জামায়াতের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এরইমধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন, প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি মেহরীন মোস্তফা দিশিসহ এক ডজন প্রার্থী।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।

এ আসনটিতে গত সংসদ নির্বাচনে হাবিবুর রহমানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নবীউল্লাহ নবী। এবারও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নিচ্ছে দলটি এমন আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়াও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম।

এসকে/এইউ