• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২০, ০৩:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৩, ২০২০, ০৩:৪৩ পিএম

ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি, কমছে না আলুর দাম

ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি, কমছে না আলুর দাম

মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলার হিমাগার গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সংরক্ষণ থাকা সত্বেও বাজারে আলুর দাম বেড়েই চলেছে। আবারো দাম বৃদ্ধিতে  নড়েচড়ে বসলেও  নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আলুর চড়া দামের কারনে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।এক শ্রেণির মধ্যসত্বভোগী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেটই আলুর দাম বৃদ্ধির পাচ্ছে বলে কানাঘুষা চলছে। 

আলু উত্তোলনের শুরুতে জমি থেকে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে নেন মৌসুমি ব্যবসায়ী-পাইকাররা।পরে সেই আলু পাইকাররা সংরক্ষন করেছেন হিমাগারে।

দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর পর গত এপ্রিল মাস থেকে বাজারে আলুর দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এদিকে, আগামী মাস থেকেই চলতি মৌসুমের আলু চাষাবাদে জমিতে নামতে যাচ্ছে প্রান্তিক চাষিরা।

এ অবস্থায় হঠাৎ করেই আলুর দাম আকাশ ছোয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সরকারও দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ বেধে দিয়েছে আলুর মূল্য। তারপরও খুচরা বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে। সব কিছুর পর এক শ্রেণির মধ্যসত্বভোগী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলুর দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করতে সবাইকে চাপও দিচ্ছে প্রশাসন।সরকার আলুর দর বেধে দেওয়ার বেশ কয়েকদিন হলেও মুন্সীগঞ্জে খুচরো বাজারে আলুর দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রশাসনিক তৎপরতার মধ্যেও কেন আলুর দাম কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা।

গত ৪-৫ দিন আগেও জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে খুচরা প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এর পরেই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুচরা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা, পাইকারি ২৮ টাকা ও হিমাগারে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের এবার সাড়ে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ লক্ষ ২৭ হাজার ২৭ মেট্রিকটন আলু। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। জেলায় বর্তমানে ৬৫টি সচল থাকা হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন। হিমাগার গুলোতে এখনো মজুদ আছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার মেট্রিকটন আলু।

আলু বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ৩-৪ দিন আগে কেজিতে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দিয়ে আলু কেনা হয়েছে স্থানীয় হিমাগার থেকে। এখন সেই আলু ৩০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করলে ক্ষতি হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ৪৫ টাকা দিয়ে প্রতি কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। মোবাইল কোর্টের ভয় আছে কিন্তু অবশিষ্ট আলু বিক্রি করার পর আর বিক্রি করবো না বলে জানান তিনি।

মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় বাজারের বিক্রেতা মো. রফিক জানান, সরকার থেকে বেধে দেওয়া আলুর দাম এখন রাখা হলে লোকসান হয়ে যাবে। ৫-৬দিন আগে কেনা এসব আলু গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেজি প্রতি আলুতে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে মজুদকৃত আলু স্বাভাবিকভাবে বাজারজাত করতে তাগিদ দিচ্ছে প্রশাসন। তাদের দাবি, করোনাকালে ত্রাণের জন্য ২০-২৫ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়েছে। এবার ২০৫০-২২০০ টাকা প্রতি বস্তা ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করতে বলা হচ্ছে।

হিমাগারের আলু দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব নয়। কেননা ইতিমধ্যে সপ্তাহে তিনদিন বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া হিমাগার গুলোতে চুক্তিপত্র অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগারে আলুর দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা বিক্রি ও মজুদকৃত বস্তা লাভ দিয়ে সরকারকে ক্রয় করার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে জেলা শহরের মুক্তারপুর এলাকার এলাইড হিমাগারের ম্যানেজার আতাউর রহমান জানান, প্রতি কেজি ২৩টাকা দরে আলু বাজারজাত করতে তাগাদা দিচ্ছে প্রশাসন।

হিমাগার কর্তৃপক্ষ এ সব আলুর মালিক নয়। মজুদকৃত আলুর অর্ধেক আছে বীজ আলু। তবে গত বারের তুলনায় এবার আলুর উৎপাদন কম আছে। এরজন্য গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেক আলু রাখা আছে।

কয়েকদফা হাত ঘুড়ে আলু বিক্রি হওয়ায় দাম বেশি হচ্ছে। যারা আলু রেখেছে তাদের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের নির্দেশনা। তারা অল্প সময়ের মধ্যে আলু বাজারজাত করবে বলে জানিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ্ আলম জানান, জেলায় ৬৫ টি হিমাগার  রয়েছে।  হিমাগার গুলোতে এখনও মজুদ আছে ১ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন আলু। এখনও হিমাগার গুলোতে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। তিনি বলেন- বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজি কিছুটা কম। এটাকে কাজে লাগিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী-মধ্যসত্বভোগীদের সিন্ডিকেটরাই আলুর দাম বাড়াচ্ছে। আমাদের আলুতে কোনো ঘাটতি ছিল না। অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সুযোগটা নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হিমাগারের মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আলুর দাম বৃদ্ধি করবেন, বা সরকাররের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

জাগরণ/এসআর/এমআর