• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২০, ০৪:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৮, ২০২০, ০৭:৫৬ পিএম

উপকূলে বিপন্ন পরিযায়ী পাখি

উপকূলে বিপন্ন পরিযায়ী পাখি

শীত এলেই প্রতিবছর ভোলার চরাঞ্চলে এসে জড়ো হতে থাকে পরিযায়ী পাখি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জেলার বিভিন্ন চরে অতিথি পাখিরা এসে জড়ো হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অনেক বিপন্ন পাখি। এরা ছুটে আসে নির্দিষ্ট খাবারের সন্ধানে। ভোলার চরাঞ্চলেই খাবার রয়েছে এদের। শীত মৌসুমে এরা ছয় মাস ভোলায় থাকে। 

বাংলাদেশে পাখিদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মধ্যে ভোলা একটি। তাই বিশ্বের বহু বিপন্ন পাখির টিকে থাকার জন্য এ অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা থেকে ভোলায় জলপাখি গণনা করতে আসা বন্য প্রাণী গবেষক ও পাখি পর্যবেক্ষক সামিউল মেহেসনিন জানান, ১৯টি চর পর্যবেক্ষণ করে এ বছর মোট ৬২ প্রজাতির ৪০ হাজার ৫১টি পাখির দেখা মিলেছে ভোলার উপকূলে। এর মধ্যে ১৫ প্রজাতির ১৫ হাজার ৩২৭টি হাঁস ও ৩১ প্রজাতির ১২ হাজার ৬৫৭টি সৈকতপাখি রয়েছে।

এ ছাড়া মহাবিপন্ন পাখি চামুচঠুটো বাটানের সন্ধান মিলেছে ৩টি, বিপন্ন পাখি নর্ডম্যান সবুজপা ১টি, সংকটাপন্ন পাখি দেশি গাঙচষা ১১০টি, বড় নথ ১৮টি। প্রায় সংকটাপন্ন পাখি কালালেজ জৌরালির সন্ধান মিলেছে ৩ হাজার ১৮৪টি, দাগিলেজ জৌরালির ৮টি, এশীয় ডউচার ৩টি, ইউরেশিয়ান গুলিন্দা ২৫৭টি, নদীয়া পানচিল ১২টি, কালামাথা কাস্তেচড়া ৭৭৫টি, মরচেরং ভুতিহাস ১টি।

শীত এলেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসে জড়ো হয় ভোলার চরাঞ্চলে। আর প্রতিবছর এসব পাখির মাঝে এসে ভিড় করে পৃথিবীর ‘মহাবিপন্ন’ কিছু পাখি। যার দেখা মেলে না পৃথিবীর কোথাও। এমনটাই জানালেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাখি পর্যবেক্ষক ইনাম আল হক। এসব বিরল পাখির মধ্যে রয়েছে ছোট মদনটাক, নর্ডম্যান সবুজপা, কালামাথা কাস্তেচড়া, কালালেজ জৌরালি, ইউরেশিয়ান গুলিন্দা। বিশেষ করে চামুচঠুটো বাটান দেশি গাঙচষা, ঝিনুকমার, মরচেরং ভুতিহাস, নদীয়া পানচিল ও বড় মোটাহাঁটু জাতের অতি বিরল পাখির সন্ধান মিলেছে ভোলার চরাঞ্চলে। বিশ্বের বহু বিপন্ন পাখির টিকে থাকার জন্য এ অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাখির বিচরণক্ষেত্রগুলো মানুষের দখলমুক্ত করতে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন পাখি পর্যবেক্ষকরা।

ইনাম আল হক বলেন, যে প্রজাতির পাখিগুলো ভোলার চরাঞ্চলে আসে বুঝতে হবে এর আহার এখানেই আছে। পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ফলে তাকে এখানেই আসতে হবে। এখানকার কাদা চরে ওই আহার না থাকলে সে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন পাখির মধ্যে চামুচঠুঁটো বাটান অন্যতম। এটি পৃথিবীর মহাবিপন্ন একটি পাখি। মিয়ানমারের মার্টবান চর এবং ভোলার চর শাহাজালাল ও দমারচর ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এর খাবার নেই। তাই শীত মৌসুমে এরা ছয় মাস ভোলায় অবস্থান করে। বাংলাদেশে পাখিদের জন্য দুটি প্রিয় জায়গার মধ্যে ভোলা একটি। তাই বিশ্বের বহু বিপন্ন পাখির টিকে থাকার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কথা হয় পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বত আরোহী এম এ মুহিতের সঙ্গে। তিনি ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর ভোলায় পাখিশুমারি করে আসছেন। তিনি জানান, ভোলার চরগুলোতে ৪ ধরনের বিরল পাখির দেখা মিলে। এগুলো হলো মহাবিপন্ন, বিপন্ন, প্রায় বিপন্ন ও সংকটাপন্ন।

এম এ মুহিত বলেন, আইন করে পাখিদের রক্ষা করা যাবে না। এ জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। অনেকে জানেও না যে পাখি মারা অপরাধ। তাই আমরা পাখি রক্ষায় বার্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি।