• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৮:০৪ পিএম

ক্ষমতায়ন বাড়লেও কমছে না ধর্ষণ-নির্যাতন

ক্ষমতায়ন বাড়লেও কমছে না ধর্ষণ-নির্যাতন

সরকারি বা বেসরকারি— নানা জায়গায় পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছেন নারীরা। তবে নারীদের ক্ষমতায়ন বড়লেও কমছে না ধর্ষণ ও সহিংসতার হার। দেশে এখনো প্রতিদিন গড়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ৪ জন নারী। 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৬২৭ জন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩ জন। অর্থাৎ, ২১৪ জন বেশি নারী ধর্ষিত হয়েছেন করোনার বছরটিতে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন নারী। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৪ জন। 

করোনার বছর নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্রগুলো আরো ভয়াবহ ছিল। বছরটিতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২০১ জন। অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন নারী। 

অন্যদিকে গত বছর স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৪০ জন। যৌতুকের জন্য পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯০ জন নারী। ৮৪ নারীর মৃত্যু হয়েছে নির্যাতনের কারণে। মামলা হয়েছে ১৩৮টি। ফতোয়া ও সালিশে নির্যাতিত হয়েছেন ৮ জন। এছাড়া এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২৭ জন নারী। 

বিষয়টি নিয়ে জাগরণের সঙ্গে কথা বলেন ব্যারিস্টার ও মানবাধিকারকর্মী মিতি সানজানা। তাঁর মতে, নারীর প্রতি পুরুষের কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রবণতার কারণে সমাজ থেকে ধর্ষণ ও সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। 

এছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে। আদালতে অনেক মামলার জটলা লেগে আছে। ফলে মূল বিচার শুরু হতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া আসামিপক্ষ ক্ষমতাবান হওয়ায় ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে থাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য।” 

অনেক সময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আসামিরা এ ধরনের কাজ করে থাকে বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে অপরাধ কমিয়ে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা পালন করার তাগিদ দেন মিতি সানজানা। সেই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান তার।

এই আইনজীবী আরো বলেন, “সমাজে কোনো ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের প্রতি আঙুল তোলে সবাই। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যদি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তাহলে অন্যরা এ ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। ভিকটিমকে যেন অদালতে দিনের পর দিন ঘুরতে না হয়।”

সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী নিম্ন আদালতে ২০১৯ সালে বিচারাধীন মামলা সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬৮ হাজার ৯৩টি। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯টি। 

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার মিশন বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে। এ ধরনের অপরাধে অনেক কিশোর জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেকে এই অপরাধ করছে। পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এছাড়া সামাজিকভাবে জেন্ডার বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।”

সঠিক যৌনশিক্ষা ও সহনশীলতার অভাবে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না—এমনটাই মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান। তিনি বলেন, “বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো এখন পর্যন্ত ইনকরপোরেট করা হয়নি। এখনো টিন এইজ ছাত্র-ছাত্রীদের যৌনশিক্ষা বা জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে সঠিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা কাঠামোতে সেই জায়গায় বড় পরিবর্তন দরকার।”

শক্তিশালী গণতন্ত্র, আইনের সঠিক প্রয়োগ আর সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা না গেলে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা সহজে কমবে না বলে মনে করছেন এই অপরাধ বিশ্লেষক। 

এক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ ও সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুকাল থেকেই এই বিষয়টি দুটি নিশ্চিতকরণে জোর দেন তারা।