• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৩:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৩:২১ পিএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার গাইডলাইন

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব

করোনাভাইরাসের কারণে ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর চিন্তা করছে সরকার। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সেই সঙ্গে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে অধিদপ্তর। 

গাইডলাইন অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গাইডলাইনে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিন ফুট দূরত্বে ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলোকে স্থাপন করা, পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের একজন শিক্ষার্থী এবং পাঁচ থেকে সাত ফুট দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাইডলাইন অনুসারে ক্লাস করতে পারবে। স্কুলে ঢোকার আগেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারিকৃত নির্দেশনা এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করে এই নির্দেশনাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে যে ব্যবস্থা নিতে হবে

১) প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সংশ্লিষ্ট সবার (শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী) স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন: কন্টাক্টলেস থার্মোমিটার স্থাপন ও প্রতিদিনের তথ্য সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

২) সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনে তিন স্তরবিশিষ্ট মাস্ক তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশনা প্রদানের পরিকল্পনা করতে হবে।

৩) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার বিষয়ে শিক্ষক ও স্টাফদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করতে হবে। 

৪) স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুকরণের পরিকল্পনা করতে হবে।

৫) স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভাষায় প্রস্তুতকরণ ও নিয়মিত হালনাগাদকরণের পরিকল্পনা।

৬) শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিতে পারে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলাফেরা করতে পারে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পরিকল্পনা গ্রহণ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করতে যা করতে হবে

১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো এবং ভৌত সুবিধাদির ম্যাপিং করে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

২) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে একই সঙ্গে বা একই শিফটে সর্বোচ্চ কতজন শিক্ষার্থীকে একত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা সম্ভব হবে, সবাইকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব না হলে সে ক্ষেত্রে সবার শিক্ষা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

৩) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আসন ব্যবস্থা কেমন হবে এবং কতজন শিক্ষার্থীকে একই শিফটে এনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, তা পরিকল্পনা করতে হবে।

৪) গাইডলাইনে দেওয়া চিত্র অনুসরণ করে, শ্রেণিকক্ষের আয়তন ও সংখ্যা অনুপাতে শ্রেণিভিত্তিক কতজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা যাবে তার সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করে পরিকল্পনা নিতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদে পরিচালনার ধারণক্ষমতার তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে আগ্রহী হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে সবাইকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতার তুলনায় কম শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে বাকি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম ১৫ দিন কোনও একটি শ্রেণি কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা নিতে হবে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শ্রেণি কার্যক্রমের সময় ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। 

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকার্যক্রম একইসঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে তা নির্ধারণের পরিকল্পনা নিতে হবে।

শিক্ষক ব্যবস্থাপনা

১) কোন কোন শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্লাস পরিচালনা করবেন এবং কোন শিক্ষককে বাড়তি সহায়তা দিয়ে দূরশিখন কার্যক্রম পরিচালনা করানো হবে, তার পরিকল্পনা করা।

২) শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা।

৩) স্থানীয় পর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলা/জেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিসের সঙ্গে আলোচনা/পর্যালোচনা সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে একাডেমিক ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের কোনো নির্দেশনা থাকলে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৪) কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তবে তার মেরামত করা অথবা বিকল্প স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫) প্রথম ১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম কেমন হবে, কতটা সময় শিখন কার্যক্রম এবং কতটা মনোসামাজিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।

৬) ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকার্যক্রম একই সঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৭) কোন কোন শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্লাস পরিচালনা করবেন এবং কোন শিক্ষককে বাড়তি সহায়তা দিয়ে দূরশিখন কার্যক্রম পরিচালনা করানো হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।

৮) কোন শিক্ষার্থী সপ্তাহে কতদিন এবং কোন কোন দিন আসবে তা শিক্ষার্থীদের ও তার অভিভাবকদের নিয়মিত অবহিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৯) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বেশি শিক্ষার্থীকে একত্রে আনার ক্ষেত্রে একাধিক শিফটের কারণে যেহেতু শিক্ষার্থীর জন্য কর্মঘণ্টা কমে যাবে, এ জন্য প্রয়োজনে শ্রেণিভিত্তিক বিষয়ের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে। (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এ সম্পর্কিত কোনও নির্দেশনা থাকলে তা অনুসরণ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।)

১০) যেসব শিক্ষার্থী দূরশিখনের মাধ্যমে শ্রেণিপাঠ নিতে ইচ্ছুক তাদের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।

১১) লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিকল্প পরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন: অনলাইন ক্লাস, বাড়ির কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রজেক্টভিত্তিক শিখনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে যেসব শিখনফল শ্রেণিকক্ষে অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না, তা অর্জন করা যায় এবং পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না এসে দূরশিখনে অংশ নিতে ইচ্ছুক তারাও সমানভাবে শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

১২) শিখন পরিবেশ আনন্দঘন করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন রং করা, বিভিন্ন ছবি দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ডেকোরেশন করা, টয়লেট/হ্যান্ড ওয়াশিং ফ্যাসিলিটিগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা। খেলার সরঞ্জামাদি বাড়ানো, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি।

১৩) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম কয়েকদিন (একাধিক শিফটে/একাধিক দিনে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা হলে প্রযোজ্য) স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়য়ে জানানোর বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে।

১৪) প্রথম এক/দুই সপ্তাহ পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সে বিষয়ে প্রত্যেক শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষকদের অবহিতকরণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।