• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২১, ০৯:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২১, ০৯:৪৯ পিএম

মহামারীর মাঝেও সুন্দরবনে শিকারির আনাগোনা

মহামারীর মাঝেও সুন্দরবনে শিকারির আনাগোনা

ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভালো নেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর মায়া হরিণেরা। সার্বক্ষনিক বন পাহারায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা বাঘ, হরিণ শিকারী, বন্যপ্রাণির চামড়া ও মাংস পাচার। চোরা শিকারী ও পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে এই দুইটি বন্যপ্রাণি।

মহামারীর মাঝে বহিরাগতদের আনাগোনা কম থাকলেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিকার। এক সপ্তাহে সুন্দরবন থেকে শিকার করা ১টি বাঘ ও ১৯টি হরিণের চামড়া, ১৬ কেজি হরিণের মাংসসহ ৮ জন চোরা শিকারী ও পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বনবিভাগ, র্যার ও পুলিশ সদস্যরা। ১৯ জানুয়ারী রাতে বাগেরহাটের শরণখোলায় ক্রেতা সেজে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের চামড়াসহ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে র্যার- ৮ সদস্যরা।

পাচারকারী গাউস ফকির (৪০) জানায়, কয়েক মাস আগে বাঘটিকে চোরা শিকারীরা হত্যা করে লবণ দিয়ে পলিথিনের বস্তায় ভরে রাখে। বাঘের চামড়াটি শরণখোলার এক চোরা শিকারীর কাছ থেকে পাচারের জন্য কিনেছিল সে। পাচারকারী গাউস ফকির কারাগারে থাকলেও এখনো আটক হয়নি বাঘ হত্যাকারী অহিদুল।

একইভাবে ২২ জানুয়ারী শরণখোলা রেঞ্জ থেকে শিকার করে আনা ১৯টি হরিণের চামড়াসহ দুই চোরা শিকারী ও পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। একই দিন রাত ২টায় চক্রের আরও দুই সদস্য গ্রেপ্তার হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ১৯টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। ২৫ জানুযারী রাতে খুলনার পানখালী থেকে ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ২ শিকারীকে গ্রেপ্তার হয়।

দেশের সীমানা পেরিয়ে এসব বন্যপ্রাণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে চীন-লাওস-থাইল্যান্ড সীমান্ত হয়ে আন্তর্জাতিক চোরাই বাজারে। নেপথ্যের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শিকারী ও পাচারকারীদের থামানো যাচ্ছেনা বলে অভিমত পরিবেশবাদীদের।

তবে আশার কথা জানিয়েছে বাগেরহাটের বন বিভাগ। বিভাগীয় কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, “বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেয়ায় ও চোরা শিকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানোয় বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে কিছুটা বেড়েছে। বন্যপ্রাণির অবাধ চলাচলের জন্য সুন্দরবনের ৫১ ভাগ এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাচারকারী আর গডফাদাররাও নজরদারীতে আছে।”

যদিও গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেইভ দ্য সুন্দরবন বলছে, “শিকারিদের আনাগোনায় প্রাণীদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিরল প্রজাতির সব বন্যপ্রাণি।” প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বন বিভাগের আধুনিক জলযান সংটক, ব্যবস্থাপনার অভাব, দুর্বল আইন আর মামলা পরিচালনায় অদক্ষতার অভাবে সুন্দরবনে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বন্যপ্রানী হত্যা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নোনাপানির বন সুন্দরবন। বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বনে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাঘ রয়েছে মাত্র ১১৪ টি। হরিণ রয়েছে এক থেকে দেড় লাখ। ২০০১ সাল থেকে এপর্যন্ত বন বিভাগের হিসেবে ৫৪টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১৫টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ১৪টি বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় জনতা। আর চোরা শিকারীরা হত্যা করেছে ২৬টি বাঘ।

আরও পড়ুন