• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১, ০৫:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১, ০৫:৩৪ পিএম

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কাগজে-কলমের’ হিসাবে ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আরও কমেছে।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এই খেলাপি ঋণের মধ্যে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ হচ্ছে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তার অর্ধেকেরও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

২০১৯ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।

বিশেষ সুবিধা ও ছাড়ের কারণে এই এক বছরে নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি। কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে কিছু ঋণ শোধ করেছেন। তার ফলেই খানিকটা কমেছে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতি তিন মাস পর এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

ওই অঙ্ক ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জুন শেষে তা ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চ মাস শেষে ছিল ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।

জুন মাস নাগাদ দেশের ৫৯টি ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।

আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির অঙ্ক ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেয় সরকার।

‘বিশেষ’ ওই সুবিধার আওতায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করেছে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে লাখ কোটি টাকার মতো পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

এর বাইরে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে, যদিও তা আর ফেরত আসছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকই আরেক তথ্যে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন।

ফলে ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো।

এই সব খেলাপি ঋণ যোগ করলে দেশে এখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো।

চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এই সংকটকালে ঋণ খেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়েছে সরকার। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হয়নি কাউকে।

অর্থাৎ ২০২০ সাল জুড়েই কোনো ঋণের শ্রেণিমান পরিবর্তন করা হয়নি। যে ঋণ যে শ্রেণিতে ছিল, সে অবস্থাতেই ছিল। কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো ঋণের কিস্তি বা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেছে।

এর মানে হচ্ছে, এই এক বছর কেউ কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি; যে ঋণ যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতে ছিল। যে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে, সেটা কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগেই দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ২১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দুই হাজার ৩২ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ চার হাজার ৬২ কোটি টাকা।