• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৭:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৭:২৪ পিএম

করোনার চেয়েও বেশি মৃত্যু আত্মহত্যা ও হৃদরোগে

করোনার চেয়েও বেশি মৃত্যু আত্মহত্যা ও হৃদরোগে

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ২ জন। তবে একই সময়ে আত্মহত্যা করেছেন দ্বিগুণ মানুষ। আর ৩৬ গুণ বেশি মানুষ মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেশে হৃদরোগ ও আত্মহত্যায় মৃত্যুর এমন চিত্র উঠে আসে। বিবিএস তাদের জরিপে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে করোনায় ও হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে এবং আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া মানুষের তথ্য তুলে ধরেছে।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ধারণা করা হচ্ছিল শ্বাসকষ্টের মতো রোগবালাই কমে যাবে। সেটা কিছুটা কমলেও, হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি একটুও। এই চিত্রই উঠে এসছে বিবিএসের জরিপে। সেখানে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ, আত্মহত্যা করে মারা গেছে ১১ হাজারের বেশি।

ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সঙ্গে বিবিএসের যৌথ কর্মশালায় এই জরিপ তুলে ধরেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “সবাই মনে করছে করোনায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই ধারণা ভুল। হৃদরোগ ও আত্মহত্যা করে করোনার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে।”

এ বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছরই বহু মানুষ মারা যায়। করোনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। করোনা হঠাৎ করে এসেছে, তাই একে আমরা মহামারি বলছি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নিরব মহামারির মতো প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে হৃদরোগ। আমাদের সবাইকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সকলকে সচেতন হতে হবে।”

আত্মহত্যা নিয়ে মনোচিকিৎসক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, “করোনার সময় শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বেই আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। করোনাকালীন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি ঘটেছে। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় একটি অদৃশ্য ভয় মানুষের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা খবরের পাতায় দেখেছি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও রাশিয়ার মতো দেশে করোনা আক্রান্ত না হয়েও অনেক মানুষ আত্মহত্যা করছে। এর ভিতর চিকিৎসকও রয়েছে।”

আনোয়ারা সৈয়দ হক আরো বলেন, “করোনা হঠাৎ এসে মানুষের ভেতরের অহংবোধ, অহমিকা, আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিয়েছে। বাইরে বের হলেই একটি অদৃশ্য শত্রুর আক্রমণের শিকার হওয়ার আতঙ্ক ভয় জেকে বসেছে মানুষের মনে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, চাকরি হারানো, অর্থনৈতিক সংকট, রোজগার করার চিন্তা। মানুষের চিত্তবিনোদনের জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। জীবনযাত্রার এমন পরিবর্তনে মানুষ হঠাৎ ধাক্কা খেয়েছে। আর এই ধাক্কার ফলে মানুষ হতাশায় ভোগা শুরু করে।”

এ মনোচিকিৎসক আরো বলেন, “করোনায় ঘরে থাকার ফলে পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকেও একটা মানসিক অশান্তির জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। আগে স্বামী-স্ত্রী কাজে বাইরে থাকতেন। দুইজনের মুখোমুখি দেখা হতো কম। কিন্তু এখন হঠাৎ ঘরবন্দি হয়ে সারাদিন একে অন্যকে দেখছে। ফলে একটা বিতৃষ্ণার জায়গা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা ঘরে থেকে সারাদিন মোবাইল-কম্পিউটার চালাচ্ছে। বাবা-মা সেটা দেখে বকাঝকা করছে। ছেলেমেয়ে আবার উল্টে তাদের জবাব দিচ্ছে। এতে একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর মানুষ যখনই তাদের সহ্য ক্ষমতা হচ্ছে তখনই ঘটছে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা।”

জরিপটি যে কর্মশালায় প্রকাশ করা হয়, সেখানে জানানো হয়, প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে বিবিএস। আর এজন্য তৈরি করা হবে জাতীয় পর্যায়ের নিবন্ধন ব্যবস্থা।