• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২১, ০৮:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২, ২০২১, ০১:১৩ পিএম

রেমিট্যান্সে আবারও নিম্নগতি

রেমিট্যান্সে আবারও নিম্নগতি

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের উল্লম্ফনে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা এক মাসের হিসাবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমে যাবে বলে ধারণা করা হলেও তা ঘটেনি। বিশ্বের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়লে গত বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর আবার বেড়েছে।

আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে আসে ২০৫ কোটি ডলার।

২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে তা আরও কমে ১৭৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স প্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসের (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি) পাঁচ মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে।

তিন মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের কম এসেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে কম এসেছে ফেব্রুয়ারি মাসে।

তবে অর্থবছরের ৮ মাসের হিসেবে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকে ‘ভালো’ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

সবমিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এক হাজার ৬৬৮ কোটি ৮০ লাখ (১৬.৬৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের এই আট মাসে ১২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। এ হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

আর এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থান করছে। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের ৯১ দশমিক ৬৬ শতাংশ রেমিটেন্স আট মাসেই চলে এসেছে।

২০২০ সালের ৯ মাসই ছিল মহামারী করোনাভাইরাসের ছোবল। ভয়-আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বছর।

গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য তছনছ-ওলোটপালট করে দিয়েছে এই মহামারী। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কমেনি; উল্টো বেড়েই চলছিল। কিন্তু জানুয়ারি থেকে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিটেন্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ।

কিন্তু দেখা গেল, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সবমিলিয়ে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

রিজার্ভ ৪৪.১২ বিলিয়ন ডলার

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৪ বিলিয়ন ( ৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারের উপরে অবস্থান করছে।

সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

একের পর এক রেকর্ড গড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।