• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২১, ০৮:৫২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৮, ২০২১, ০৪:৩৫ পিএম

রাজধানীতে নারীবান্ধব টয়লেটের অভাব

রাজধানীতে নারীবান্ধব টয়লেটের অভাব

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আসমা চৌধুরী জয়িতা। বেশির ভাগ দিনই মিরপুর থেকে অফিস আসতে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় তাকে। ফেরার পথেও একই হাল। আসা-যাওয়ার এই নিত্য ধকলের মাঝেই কখনো কখনো প্রয়োজন পড়ে টয়লেটে যাওয়ার। কিন্তু রাজধানীর মতো ব্যস্ত নগরে নেই তেমন নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট। তাই অতি প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক কর্মের ডাক এলেও অপেক্ষা করতে হয় বাসা বা অফিস পৌঁছানো পর্যন্ত।

কারওয়ান বাজারের কাঠপট্টি এলাকায় কথা হয় জয়িতার সঙ্গে। তিনি বলেন, “শুধু রাজধানী নয়, নারীদের ব্যবহার উপযোগী পাবলিক টয়লেট দেশের কোথাও নেই। আমরা যারা প্রতিদিন বাসার বাইরে বের হই, তাদেই এই বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হয়। তারপরও কখনো কখনো চলতি পথে টয়লেট যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিপদে পড়তে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেটের অভাবে তখন আমাদের বাসা বা গন্তব্যের অপেক্ষা করতে হয়।”

এমন সমস্যা জয়িতার একার নয়। রাজধানীর প্রায় সব নারীকেই একই ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিষ্কার পাবলিক টয়লেটের অভাবে বেশির ভাগ সময়ই নারীরা তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কাজটি চেপে রাখেন। দীর্ঘক্ষণ এভাবে থাকলে শারীরিক কষ্ট তো হয়ই, দীর্ঘদিন একই অভ্যাস থাকলে নানা শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়। আবার নিরুপায় হয়ে কখনো কখনো এসব নোংরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করলে পড়তে হয় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকাতে পাবলিক টয়লেটের বেশ অভাব রয়েছে। যেগুলো আছে সেগুলোও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব সময় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। দুর্গন্ধে টেকা যায় না এক মুহূর্তও। বিশেষ করে নারী বা মেয়েদের জন্য এসব পাবলিক টয়লেট মোটেও ব্যবহার উপযোগী নয় বলে অভিযোগ করেন ব্যবহারকারীরা। আবার নারী-পুরুষ একই টয়লেট ব্যবহার করায় অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুহি। তিনি বলেন, “পাবলিক টয়লেটগুলো বেশির ভাগ সময়ই স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। অনেক জায়গায় স্যানিটারি ব্যবস্থাও থাকে না। আবার টয়লেটগুলোর ভেতরের চিত্র এত বাজে আর এত দুর্গন্ধ যে, একবার গেলে দ্বিতীয়বার যাওয়ার রুচি হয় না। এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা।”

দেশের সব জায়গায় যদি স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট তৈরি করা যায়, তাহলে ছেলে-মেয়ে সকলের জন্যই সুবিধা হতো বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ছাত্রী বর্ণ বলেন, “ঢাকা শহরে নারীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পাবলিক টয়লেট নেই। যে কয়েকটি আছে, সেগুলোও খুব বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা নারীদের ব্যবহার উপযোগী নয়।”

অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, “অনেক জায়গায় দেখা যায়, নারীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট পুরুষরাও ব্যবহার করছেন। তাই পাবলিক টয়লেটগুলো আমরা তেমন একটা নিরাপদ মনে করি না। তারপরও বাইরে বের হলে মাঝে মাঝে নিরুপায় হয়ে এসব নোংরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয়।”

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সানজিদা স্বর্ণা বলেন, ‍“শুধু মেয়ে নয়, ছেলেদের জন্যও যে রাজধানীতে যথেষ্ট পাবলিক টয়লেট রয়েছে, তা কিন্তু না। সেখানে মেয়েদের অবস্থা চিন্তা করুন। মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকে। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে চাইলেই আমরা হুট করে কোনো শপিং মলে ঢুকে যেতে পারি না, কোনো একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সাহায্য চাইতে পারি না। বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। যদি কিছু জায়গাভিত্তিক পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমাদের জন্য খুবই উপকার হয়। সেগুলো ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে টিকেটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আবার টিকেট ছাড়াও করা যেতে পারে। কারণ যাই বলেন না কেন, পথে-ঘাটে চলতে ফিরতে পাবলিক টয়লেট খুবই প্রয়োজনীয়।”

পাবলিক টয়লেট নিয়ে মেয়েদের কতখানি সমস্যায় পড়তে হয় তা অনুধাবন করে স্বর্ণার সহকর্মী সজল কুমার পাল বলেন, “টয়লেট সমস্যার ক্ষেত্রে ছেলেদের বিষয়টা মেয়েদের থেকে পুরোটাই আলাদা। ছেলেদের টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে তারা সেটা চেপে রেখে বা যেকোনো একটা জায়গায় গিয়ে বা অনেক সময় দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক কর্মটি সেরে ফেলে। কিন্তু মেয়েরা চাইলেই সেটা পারেন না। তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই আমি মনে করি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই যদি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে ভালো হতো।”

রাজধানীতে নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান। জাগরণকে তিনি বলেন, ‍“রাজধানীতে পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা তো অবশ্যই আছে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটা খুবই অপ্রতুল। এ ব্যাপারে অস্বীকার করার মতো কিছু নেই। তবে আমরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক সহায়তায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু নারী ও পরিবেশবান্ধব পাবলিক টয়লেট তৈরি করেছি। অনেকগুলো পাবলিক টয়লেটকে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। আমাদের এই প্রক্রিয়া চলমান আছে।”

ডিএনসিসি’র এ কর্মকর্তা আরো বলেন, “আমাদের নগরবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি, সেই তুলনায় পাবলিক টয়লেট অনেক কম রয়েছে। তবে এ বিষয়টা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা আমরা আরো বাড়াবো, যাতে নগরবাসীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া যায়।”