• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২১, ০৬:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৭, ২০২১, ০৭:৪১ পিএম

‘বাঙালি জাতির জন্য আরেকটি সূর্য উঠেছিল টুঙ্গিপাড়ায়’

‘বাঙালি জাতির জন্য আরেকটি সূর্য উঠেছিল টুঙ্গিপাড়ায়’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিত্ত-বৈভব প্রত্যাখ্যান করে দেশ ও জনগণের অর্থাৎ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন বলে জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে  আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছে জ্যোতির্ময়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার (১৭ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়।

এর আগে বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি সেখানে পৌঁছান।

রাজনীতিবিদদের দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীর এই দিনে তাই আমি রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাবো, আসুন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করি।”

আবদুল হামিদ বলেন, “কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিটাকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতি আর পেশা এক জিনিস নয়। পেশার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আর রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার একটি মহান ক্ষেত্র। তাই রাজনীতিকে পেশা মনে করলে দেশ ও জনগণের কথা ভুলে নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “পাকিস্তান জেলে থাকাকালীন ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল আকবরের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু তার কাছে এসে প্রাণের ভয়ে নরম হয়ে যাবেন এবং সেই সুযোগে তার কাছ থেকে আপসের প্রস্তাব পাওয়া যাবে। তিনি এই মানসে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘দুঃখিত, ও হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ও হাত আমি স্পর্শ করতে পারব না’। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র একজন মহানায়কই এমন সাহসী উক্তি উচ্চারণ করতে পারেন। নিজের দেশকে ও নিজের মানুষদের ব্যক্তি ও পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেই মৃত্যুকে জয় করে স্বাধীনতা ও মুক্তির গান গাওয়া যায়।”

বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়ক উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, “পৃথিবী আলোকিত করার জন্য প্রকৃতির নিয়মে পূবাকাশে সূর্য উঠেছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। সেদিন বাঙালি জাতির জন্য সোনালি আভা নিয়ে আরেকটি সূর্য উঠেছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, সে সূর্যের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। যে সূর্যের উজ্জ্বল ও প্রখর রোদ এসে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছিল একটি জাতি-রাষ্ট্র, লাল-সবুজের একটি পতাকা ও একটি জাতীয় সংগীত। সাথে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঠাঁই করে দিয়েছিল বাঙালিকে, এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের নতুন ঠিকানা- বাংলাদেশ।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সালিহ্।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার হাতে ‘মুজিব চিরন্তন’ স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফাজনা আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শিশু শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শিশু শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশনার পর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগারের ধারণকৃত ভিডিওবার্তা প্রচার করা হয়।

এরপর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্। এরপর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সর্বশেষ অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।