• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২১, ০৩:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২, ২০২১, ০৫:৪৬ পিএম

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বাজারে

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বাজারে

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ। একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ জন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তিরও জায়গা নেই। আইসিইউর জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে অনেক আগেই। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই রাজধানীর বাজারগুলোতে।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন বহু ক্রেতা। বিক্রেতারা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ‘মিনতি’রা (যারা ক্রেতাদের পণ্য পৌঁছে দেন)। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউই। বাজারে একে অন্যের গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নয়, মাস্ক পরায়ও অনীহা দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতা-শ্রমিক সবার মাঝে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই নেই মাস্ক। অনেকের আবার মুখে মাস্ক থাকলেও তা লাগানো থুতনির নিচে। কারও কারও আবার মাস্ক হাতে। সবজি বাজার থেকে শুরু করে মাছ বাজার, মুদিদোকান থেকে শুরু করে চালের বাজার সব জায়গায় একই দৃশ্য।

গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, খিলগাঁও, মৌচাক, ফার্মগেট, কাঁটাবন কাঁচাবাজার ঘুরেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার এই একই দৃশ্য দেখা গেছে। অথচ করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ মোকাবিলায় দিশেহারা স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।

কারওয়ান বাজারে মাস্ক না পরেই সবজি বিক্রি করছেন তানিয়া। কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আল্লাহ আমগোরে করোনা দিবো না। আমরা গরিব মানুষ, কষ্ট করি খাই। মাস্ক না পরলেও আমাগো করোনা অয় না। করোনা হয় বড়লোক গো। আল্লাহ তাগোরেও হেফাজত করুক।”

মো. মঈনউদ্দিন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “আল্লাহর ওপর ভরসা করে মাস্ক পরি না। আল্লাহ করোনা দিয়েছে, উনিই হেফাজত করবেন। এটারে এত ভয় পেয়ে কোনো লাভ নাই।”

থুতনিতে মাস্ক লাগিয়ে সবজি কিনছিলেন এক ক্রেতা। করোনার মধ্যেও কেন মাস্ক পরছেন না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ক্রেতা বলেন, “মাস্ক লাগিয়ে কথা বলা যায় না। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলার জন্য খুলেছিলেন।” এই কথা বলেই তিনি আবার মাস্ক পরে নেন।

রহমত উল্লাহ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‍“গরমে অসহ্য লাগে। মাস্ক পরে বাজারে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। তাই মাস্ক খুলে রাখছেন। বাজার থেকে বের হয়েই আবার পড়বেন।”

তবে কিছু সচেতন ক্রেতাকেও দেখা যায়। যারা মাস্ক পরে বাজার করছেন। চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। তাদেরই একজন এনামুল করিম। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‍“সরকারের উচিত কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারগুলোতে শুধু পাইকারি বিক্রির ব্যবস্থা করা। খুচরা পণ্য বিক্রি ছোট ছোট বাজারগুলোতে হলে জনমসাগম কিছুটা কম হবে। পাশাপাশি সবাই যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে লক্ষ রাখা। জনসাধারণেরও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিনে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের ভিড় বেড়েছে। অনেক জায়গায় ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে সব হাসপাতালেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের প্রধান এবং কোভিড রেসপন্স টিমের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, হাসপাতালগুলোতে রোগী ধারণের জায়গা পর্যন্ত নেই। অক্সিজেনের অভাবে ডাক্তাররা রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে পারছেন না। দিন দিন এই অবস্থা আরও প্রকট হচ্ছে।

মো. দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে মাঝে মাঝে নিজেকে অসহায় লাগে। কারণ এত পরিমাণ রোগী যে, আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু মানুষেরে মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, কিছুদিন পর সবাইকে চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হবে না। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এক দুই সপ্তাহ পর দেখা যাবে মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে আছে।”

এই চিকিৎসক আরও বলেন, “করোনার টিকা নেওয়ার পর মানুষ মনে করেছে, তাদের আর করোনা হবে না। মানুষ মাস্ক পরা ভুলে গেছে। এই উদাসীনতা যে আমাদের কত বড় ক্ষতি করেছে বলে বোঝানো যাবে না।”

সংক্রমণ মোকাবেলায় করণীয় হিসেবে তিনি বলেন, ‍“চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা তো আর বাড়ানো যাবে না। একদিনে সেটা করাও সম্ভব নয়। তাই যেখান থেকে সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভাইরাসটা যাতে একজন থেকে আরেকজনে না ছড়ায় এ জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করা। নিজে মাস্ক পরার পাশাপাশি অন্যকেও এই ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে নিজে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত রাখা যাবে। পাশাপাশি সংক্রমণ পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হবে।”

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‍“শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে তাদের চলাফেরার নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। অপ্রয়োজনের ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তা পরিস্থিতি অনুযায়ী খুবই হালকা। এসব নির্দেশনা মানার জন্য জনগণকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য জরিমানাসহ যা যা করা দরকার তা করতে হবে।”