• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৩:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৩:০৫ পিএম

বিধিনিষেধে বাধাগ্রস্ত অনলাইন উদ্যোক্তারাও

বিধিনিষেধে বাধাগ্রস্ত অনলাইন উদ্যোক্তারাও

হাল আমলে ঘরে বসে পণ্য কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অনেক ক্রেতা। এতে সময় ও ঝক্কি—দুই-ই সাশ্রয়। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তো আছে। তাই এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার চাহিদা বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। অনেক উদ্যোক্তা চাকরি ছেড়ে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। কিন্তু বর্তমান লকডাউনের কারণে হোঁচট খাচ্ছেন তারাও।

গত বছর দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনলাইনভিত্তিক বেচাকেনা। কেউ চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ব্যবসা, কেউ-বা চাকরি হারিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হন। গত এক বছরে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এভাবে সাফল্য অর্জন করেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ পালন করার পর আরো এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করাতে চিন্তায় পড়েছেন তারা।

অনলাইনে ব্যবসা করা উদ্যোক্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই অনলাইনে ঘরে বসে পণ্য কিনছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। গণপরিবহন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। আবার নিজে সশরীরে গিয়েও পণ্য কিনতে পারছেন না করোনা সংক্রমণের কারণে। এতে ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও সামনে ঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

২০১৯ সাল থেকে অনলাইনে শাড়ি, পাঞ্জাবি, হাতে বানানো গয়না, টিপ, বুকমার্কসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন ঝুমকি বসু। তার পেজের নাম ‘রূপসা’। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বেশ কিছু নতুন পণ্যের আয়োজন করেছেন তিনি। ক্রেতাদের সাড়াও আছে ভালো। প্রতিদিনই একটি-দুটি করে পণ্য বিক্রি করছেন। কিন্তু সঠিক সময়ে সেগুলো ডেলিভারি দিতে পারছেন না বলে একরকম হতাশার সুর শোনা যায় তার কণ্ঠে।

ঝুমকি বসু জানান, লকডাউনের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তাই অনলাইনে কেনাকাটার দিকেই বেশি ঝুঁকছে। আগে তিনি বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি গিয়ে পণ্য সংগ্রহ করতেন। আর সেগুলো ডিজাইন করে নিজের পেজে বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন সেটা করতে পারছেন না।

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, “সরাসরি গিয়ে পণ্য কিনতে না পারার কারণে এখন আমাকেই অনলাইন থেকে কাঁচামাল কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে পারছি না। ডেলিভারি দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। বিশেষ করে লকডাউনের সময় সঠিক সময়ে গ্রাহককে পণ্য পৌঁছে দিতে সমস্যা হচ্ছে।”

অনলাইনে ‘প্রীতিলতা’ পেজ থেকে হারবাল হেয়ার ওয়েল বিক্রি করেন মাসুদুজ্জামান রাসেল। তিনি বলেন, “পয়লা বৈশাখে সবারই একটা কাঙ্ক্ষিত প্রস্তুতি থাকে। সেই হিসেবে আমিও তাদের বাইরে ছিলাম না। এদিকে পয়লা বৈশাখ থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে আবার। তাই প্রস্তুতি থাকলেও অনেকটা ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসা নিয়ে।”

মাসুদুজ্জামান রাসেল আরও বলেন, “আমি হোমমেইড হারবাল হেয়ার ওয়েল বিক্রি করি। এটা তৈরির জন্য যে কাঁচামালগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলো আমি সংগ্রহ করি ঝিনাইদহ, বাগেরহাট থেকে। এখন লকডাউনের কারণে সেই কাঁচামালগুলো সংগ্রহ করতে পারছি না। ফলে বেশ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।”

তবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই মুখ্য বিষয় বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। চাইলেই তো আর লকডাউনে আমি বাগেরহাট যেতে পারব না। তাই পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা করে এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। এই মুহূর্তে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই হচ্ছে হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।”

তবে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ক্রেতাদের একেবারেই সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ‘বৃষ্টি বিলাস’ পেজের স্বত্বাধিকারী সাবিহা আক্তার বৃষ্টি। তিনি বলেন, “মার্কেটগুলোতে যেমন ক্রেতা নেই, তেমনি অনলাইনেও আমি তেমন ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছি না। করোনার এই ধাক্কা আসার আগে ভালোই সাড়া ছিল, বিক্রি ছিল। কিন্তু এখন প্রায় একেবারেই বন্ধ। অনেকে হয়তো করোনার সংক্রমণ বাড়ার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা কী হয় না-হয়, তাই টাকাটা জমিয়ে রাখছে।”

সাবিহা আক্তার বৃষ্টি আরও বলেন, “আমি মূলত লেদারের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করি। লেদারের জুতা, ব্যাগ একটু ব্যয়বহুল হওয়ায় মানুষ ঈদের সময়ই এই জিনিসগুলো বেশি কিনে। তাই ঈদের জন্য একটা ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমি আমার সাপ্লাইয়ারের কাছে যেতে পারছি না, পণ্যগুলোও দেখতে পারছি না।”

পয়লা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রস্তুতি নিলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক উদ্যোক্তা লকডাউন তুলে দিলেই ভালো হয় বলে মনে করছেন।