• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০১:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৪:৫৩ পিএম

হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার

হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি।

রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্টকাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দুটি মামলা হয়েছে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। এছাড়া, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন রয়েল রিসোর্টে নারীসঙ্গীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে রাতেই ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসায় না গিয়ে তিনি পাশেই জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় যান। সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

ওই মাদরাসার একটি কক্ষে বসেই ফেসবুকে লাইভ করছিলেন হেফাজতের এই নেতা। তবে সর্বশেষ লাইভে এসে দ্বিতীয় বিয়ের দাবির স্বপক্ষে ‘স্ত্রীর কাছে সত্য গোপন করার অবকাশ রয়েছে’ —এমন বক্তব্য দিয়ে নিজ দলের আলেম-ওলামাদের কাছে সমালোচনার শিকার হন তিনি। পরে চাপের মুখে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিটও করে দেন। 

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মামুনুল হক ওই মাদরাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ ও তেজগাঁও বিভাগের শতাধিক পুলিশ প্রথমে ওই মাদরাসাটি ঘিরে ফেলে। এ সময় মাদরাসার ভেতরে দেড় শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পুলিশের অভিযানে প্রথমে তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত পুলিশ দেখে হাল ছেড়ে দেন। পরে মামুনুল হককে দোতালার ওই কক্ষ থেকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। প্রথমে তাকে মিরপুর সড়কে পুলিশের তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।

নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁয়ে অবস্থিত রয়েল রিসোর্ট থেকে মামুনুল হককে নারীসহ আটক করেন স্থানীয়রা। বিকেলে এ ধরনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোশাররফ হোসেন বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামুনুল হককে থানায় নেওয়ার পথে রিসোর্টে হামলা চালায় হেফাজতের কর্মীরা। পরে তাকে নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হেফাজতের কর্মীরা। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।” 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক জানান, শনিবার দুপুরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে যান। জাদুঘর ঘুরে দেখে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ওই রিসোর্টে যান।

মামুনুল বলেন, “আমার বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা এখানে একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এসেছিলাম।...এখানে অনেক উচ্ছৃঙ্খল লোক এসেছে। আপনারা দেখেছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”

পুলিশের ওপর হামলা ও রিসোর্ট ভাঙচুরের অভিযোগে বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এরআগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনায় মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সোমবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় এ মামলা করেন।  

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, আসামিরা বায়তুল মোকাররমসহ মহানগরের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ২৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় মাওলানা মামুনুল হক বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে উক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা জামায়াত-শিবির-বিএনপি, জঙ্গি মৌলবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সারা দেশব্যাপী গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার পতনের লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনা করে। 

কয়েকদিন ধরে হেফজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমির মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জুনায়েদ আল হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সহিংসতা এবং সম্প্রতি সহিংসতাতেও সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। মাওলানা জালাল উদ্দিন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সহিংসতার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।

মাহবুব আলম জানান, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলায়ও তিনি আসামি। আরও একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

১৪ এপ্রিল (বুধবার) রাত ১১টায় রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আফেন্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একইদিন সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মাহবুব আলম বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় লালবাগ থেকে ডিবির একটি টিম মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে গ্রেপ্তার করেছে।”

১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার ) বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শরিফউল্লাহ নামে হেফাজতে ইসলামের আরও এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। গ্রেপ্তার শরিফউল্লাহ ঢাকা মহানগর হেফাজত ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

১১ এপ্রিল (রোববার) হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ বাহিনী।  ঢাকা মহানগর মতিঝিল বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান রিপন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হেফাজতের শীর্ষনেতাদের এক বৈঠকে যোগ দিতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন তিনি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছিল। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।