• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২১, ০৫:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২১, ১০:৪৬ এএম

‘শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখছি’

‘শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখছি’

প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর ভাগ্যের সন্ধানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জামান আবিয়া বেগম। জীবনসংগ্রামে কখনো করেছেন ভিক্ষা, কখনো বিক্রি করেছে সংবাদপত্র। বেশ কয়েক বছর সিগনালে সিগনালে ফুল আর তোয়ালে বিক্রি করে ভালোই চলছিল তার। মাথা গোঁজার মতো কোনো ঘর না থাকলেও ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি নিয়ে দু’বেলা খাবার ঠিকই কপালে জুটছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন এক বেলা খাবার জোগাড় করতেই তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। কখনো কখনো শুধু পানি খেয়েই রোজা রাখছেন তিনি।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের উল্টো পাশে ফুটপাতে বসবাস ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার। তার বাড়ি রংপুরে। কয়েক বছর ধরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানেই আছেন। খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম— সবই চলে এই ফুটপাতে।

সোনারগাঁও এর সামনের এই সিগনালে ফুল আর তোয়ালে বিক্রি করে চলে আবিয়ার জীবন। তার দুই ছেলের পেশাও একই। কিন্তু লকডাউনের কারণে গত এক সপ্তাহ তাদের কারোরই তেমন কোনো আয় নেই। ফলে ছোট ছোট নাতি-নাতনিদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহরে দিন কাটছে তাদের।

আবিয়া বেগম জানান, সিগনালে ফুল আর তোয়ালে বিক্রি করে তার দৈনিক চার-পাঁচ’শ টাকা আয় হতো। ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুইবেলা কোনো মতে ডাল-ভাত খেতে পারতেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে আয় অনেক কমে গেছে। আর গত এক সপ্তাহ ধরে লকডাউনের কারণে তা পুরোপুরিই বন্ধ।

এই বৃদ্ধা বলেন, “লকডাউনে রাস্তায় মানুষ নাই। বেচাকেনাও নাই। কাজ করে দুই টাকা আয় করবো সেই সুযোগও নাই। তাই রাস্তায় বসে মানুষের কাছে হাত পাতি। দুই টাকা, পাঁচ টাকা যা পাই তা দিয়ে বাজার থেকে আধা কেজি, এক কেজি চাল কিনি। আর কারওয়ান বাজার থেকে আলু-মরিচ খুঁজে আনি। তাই দিয়েই খাই।”

আক্ষেপ করে এই বৃদ্ধা বলেন, “মানুষ মাছ-মাংস খায়, আর আমরা ডাল-লবণ দিয়েও ভাত খেতে পারি না। আজও শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখছি। ইফতারে কী খাবো জানি না।”

গত বছর লকডাউনের সময় বাড়ি চলে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “এই বছর লকডাউনে বাড়ি যেতে পারি নাই। একটু সাহায্য সহযোগিতা কেউ করে না। খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। নাতি-নাতনিদের মুখেও তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারি না।”