• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১, ২০২১, ০১:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১, ২০২১, ০১:২৩ এএম

মহান মে দিবস

মহান মে দিবস

আজ শনিবার ১লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। সারাবিশ্বে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় দিবসটি। বাংলাদেশেরও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবছর ১লা মে'র এই দিনে শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা দিয়ে নানা কর্মসূচিতে উদযাপন করা হয় দিবসটি।

দিনটি শ্রমিক বিপ্লবের দিন। শ্রমজীবী মানুষের দিন। শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি, ভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন। ১৮৮৬ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে জন্ম হয় স্ফুলিঙ্গের। যা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। শুরু হয় বিক্ষোভ, এরপর দাবি আদায়। সোচ্চার কণ্ঠে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে একত্রিত হন হাজারো শ্রমিক।

শিল্প বিপ্লবের ওই সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দীর্ঘ সময় কাজ করায় অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন শ্রমিকরা। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেও মজুরি পেতেন খুবই সামান্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিকাগোর একদল শ্রমিক কাজের সময় কমিয়ে আনার জোর দাবি জানান। ১৮৮৪ সালের কথা। কর্মঘণ্টা কমিয়ে শ্রমিকদের যথাযথ মর্যাদা ও সুরক্ষার দাবি তোলেন শোষিত শ্রমিকরা।

তাদের সেই দাবির ধারাবাহিকতায় ১৮৮৬ সালের শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে এনে বিল পাস হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছরের ১লা মে থেকেই সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবেন শ্রমিকরা, এই মর্মে শুরু হয় নতুন এক ধারা। যা আজও অবদি বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে।

এদিকে ওই দিন বিল পাস হলেও মালিকপক্ষের ছিল অনিহা। তারা মানতে নারাজ ছিলেন এবং নিজেদের ইচ্ছেমতোই শ্রমিকদের খাটাটেন। এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক। দিনে দিনে এই সংখ্যা বেড়েই যায়। প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক জড়ো হোন অধিকার আদায়ে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে শ্রমিক সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অগাস্ট স্পাইস। ওই সময় সমাবেশেই পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয়। নিহত হন ৭ পুলিশ। এরপরই শুরু হয় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশে সংঘর্ষ। প্রাণ হারান ১১ শ্রমিক।

১৮৯০ সাল, যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠে সমাজতান্ত্রিক ও লেবার পার্টির নতুন জোট। 'সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল' নামের এই জোট ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের হে মার্কেটের সামনে সমাবেশ করে। উদ্দেশ্য শ্রমিক বিক্ষোভে প্রাণ হারানোদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তাদের ওই সমাবেশে সাড়া দেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। সেই দিনও শ্রমিকদের কাজের সময় ৮ ঘণ্টা করার জোর দাবি জানানো হয়।

সব পরিস্থিতি পর্যালোচনায় পরবর্তীতে ১৯০৪ সালে ১লা মে শ্রমিক দিবস হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।

এবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্থগিত করা হয়েছে সব কর্মসূচি। তবে দিবসটি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্য বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, "বাংলাদেশের মতো শ্রম নিবিড় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও হৃদ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, "মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।"

এছাড়াও বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দিবসটি উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোও পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।