• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২১, ০৫:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৭, ২০২১, ০৫:৩০ পিএম

সোহরাওয়ার্দীর গাছ রক্ষায় সরব পরিবেশবিদরা

সোহরাওয়ার্দীর গাছ রক্ষায় সরব পরিবেশবিদরা

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাটা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। 

সেই জায়গায় ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, হাঁটার পথ, টয়লেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কাটার জন্য লাল ক্রস দিয়ে চিহ্ণিত করে রাখা হয়েছে আরও বেশ কিছু গাছ। তবে উন্নয়নের নামে নির্বিচারে এসব গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, নগরবিদ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।

শুক্রবার (৭ মে) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে সেভ ফিউচার বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। 

এই সময় তাদের সঙ্গে যুক্ত হন নগরবিদ ইকবাল হাবিব, পরিবেশ নদী-প্রকৃতি সংরক্ষক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশের সভাপতি সুমন সামস, গ্রিন মি-এর প্রতিষ্ঠাতা রাশেদ শিমুলসহ বিভিন্ন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।

মানববন্ধনে সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন করে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এখনো অর্ধশত গাছে চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো কাটা হবে। তবে আর একটি গাছও আমরা কাটতে দেব না।

এ সময় সংগঠনটি গাছকাটা বন্ধসহ পরিবেশ রক্ষায় চারটি দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো- 

১. অবিলম্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বাকি উদ্যানগুলোতেও গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না।

২. ইতোমধ্যে যেসব বৃক্ষ নিধন হয়েছে সেগুলোর ক্ষতি পোষাতে দশ হাজার নতুন বৃক্ষ রোপণ।

৩. গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট, হাঁটার রাস্তা এবং গাড়ির পার্কিং করার কাজ বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে যতটুকু কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো ভেঙে সেখানে নতুন গাছ লাগাতে হবে।

৪. উদ্যানের গাছ ও প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে।

এসব দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলন করা কথা জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।

মানববন্ধনে পরিবেশকর্মী মোফাজ আহমেদ বলেন, “এখানে গাছ কেটে ঢাকাবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, বৃক্ষ হত্যা করে কোনো উন্নয়ন বা সৌন্দর্য বর্ধন হতে পারে না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই, আর কোনো বৃক্ষ না কাটার জন্য।

আরেক পরিবেশকর্মী নয়ন সরকার বলেন, “বায়দূষণের কারণে বর্তমানে ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে সবুজে ঘেরা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শত শত গাছ কাটা হচ্ছে উন্নয়নের নামে। যা আমাদের হত্যা করার মতো। কারণ গাছ না থাকলে আমরা অক্সিজেন পাব কোথায়? রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বলা হয় ঢাকার ফুসফুস। গাছ কেটে আমরা যেন আমাদের নিজেদের ফুসফুসকেই আঘাত করছি। তাই অবিলম্বে এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।”

নোঙর বাংলাদেশের সভাপতি সুমন সামস বলেন, “সরকারের ভেতরে এত সচেতন মানুষ থাকা সত্বেও কেন লকডাউনের ভেতরে রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে নিতে হচ্ছে, এটি আমাদের মাথায় আসেছে না। আবার অনেক গাছ কাটার জন্য ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। অকারণে অযথা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জিলাপির মতো গাছ যেখানে আছে প্রকল্পের নকশাটাও যেন সেই দিকে যাচ্ছে।”

এই পরিবেশবিদ আরও বলেন, “ইতোমধ্যে কেটে ফেলা গাছ কালীমন্দিরের পেছনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কেউ যেন দেখতে না পায় সে জন্য পাতা এবং ঝোপঝাড় দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে। যেসব গাছ কাটার জন্য ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোতে আমারা প্লেকার্ড দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লাগিয়ে দিচ্ছি। যাতে সেগুলো আর কেউ না কাটে।”

গ্রিন মি এর প্রতিষ্ঠাতা রাশেদ শিমুল বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশদূষণ নিয়ে পুরো পৃথিবীই সোচ্চার। অথচ ঢাকা শহরের মতো জায়গা, যেখানে বনাঞ্চল নেই, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রচণ্ড অভাব, সেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক জায়গায় কীভাবে গাছ কেটে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়।

প্রকৃতিই তো একটি সুন্দর বিষয় মন্তব্য করে এই পরিবেশবিদ বলেন, প্রকৃতি ধ্বংস করে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ জনগণকে কী দিতে চাইছে তা আমি বুঝছি না। এই গাছগুলো মানুষকে যেমন অক্সিজেন দেয়, তেমনি এই গাছগুলোতে পাখিরা বাসা বাঁধে। তাই আমরা এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (৩য় পর্যায়) জন্য ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের নকশা করেছে স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আর এটি বাস্তবায়ন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)।

এই প্রকল্পে রয়েছে ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং (৫০০টি), জলাধার, হাঁটার পথ, আন্ডারপাস, মসজিদ, অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়ন, খাবারের দোকান এবং আনুষঙ্গিক নির্মাণ। এসব নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে চলামান আছে। আর এসব কাঠামো নির্মাণের জায়গায় যেসব গাছ পড়ছে সেগুলোই কাটা পড়ছে।