• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ১১:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১০, ২০২১, ১১:৪৯ এএম

‘কালো টাকা সাদা করা নীতি পরিপন্থী’

‘কালো টাকা সাদা করা নীতি পরিপন্থী’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতির নীতির পরিপন্থী, সাম্যের পরিপন্থী বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

রোববার (৯ মে) এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একথা বলেন।‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শিরোনামের ভার্চ্যুয়াল সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।  

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “যে তিনটি খাতে কালোটাকা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে নতুন কিছু উৎপাদন হয় না। অনুৎপাদনশীল খাতেই এটি বিনিয়োগ হচ্ছে। ৫০ বছরের বাংলাদেশে একটি শ্রেণির জন্য এই সুযোগ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, “সৎ করদাতার সঙ্গে এটি অন্যায় আচরণ। সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা থাকলেও সেটিও ভঙ্গ হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতির নীতির পরিপন্থী, সাম্যের পরিপন্থী।”

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পুরোপুরি অনৈতিক। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি, তারা ৩০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছি। আর যারা কালোটাকা সাদা করছেন, তারা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সৎ করদাতাদের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে।”

এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয় সেটি হতে পারে শিল্প খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

বিজিএমইএ'র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের নাম করে এই অনৈতিক সুযোগ বেশি দিন দেওয়া ঠিক হবে না।”

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মানে হলো করের অন্যায্যতা।”

করের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, “দিনের পর দিন বছরের পর বছর বাংলাদেশে শিক্ষা খাত অবহেলিত রয়ে গেছে। মাধ্যমিকে (এমপিওভুক্ত নয়) হাজার হাজার শিক্ষক অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন। তাদের এই পেশায় ধরে রাখতে আগামী বাজেটে কী থাকছে।”

অভিযোগ করে তিনি বলেন, “চলতি বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, তার তথ্য কেউ জানি না। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ পাওয়া যায় না।”

করোনার সময়ে শিক্ষায় বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে, শিশুশ্রম বাড়ছে ও বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। 

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, “বাজেট হওয়া উচিত সম্প্রসারণমূলক। আসছে বাজেটে মানুষের ভোগ ব্যয় বাড়াতে হবে। ভোগ ব্যয় না বাড়লে পুষ্টিহীনতা বাড়বে। দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নেট রপ্তানি বাড়াতে হবে।”

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু সেই টাকাটাও কি সঠিকভাবে খরচ হচ্ছে কি না, তার নজরদারি হয় না। প্রান্তিক মানুষের জন্য বরাদ্দের টাকা নজরদারি করা উচিত।”

বাজেটে শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট ও ব্যাংকের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে ঢালাওভাবে কেন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করার যদি সুযোগই দেওয়া হয়, সেটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কেন নয় সেটিও জানতে চেয়েছেন তারা।